
ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা বা সংলাপ ইরানের সমস্যাগুলো সমাধানে কোনো ধরনের সহায়তা করবে না।
তিনি বলেছেন, মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা ইসলামী ইরানের জন্য যৌক্তিক বা বুদ্ধি-বিবেচনা-সম্মত, প্রজ্ঞাপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ হবে না।
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিজয়-বার্ষিকীর প্রাক্কালে ঐতিহাসিক ১৯ বাহমান তথা ১৯৭৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারিতে ইমাম খোমেইনীর প্রতি বিপুল সংখ্যক বিমান-সেনার আনুগত্য ঘোষণার বার্ষিকী পালন উপলক্ষে আজ বিমান-বাহিনীর সদস্যদের এই সমাবেশের আয়োজন করা হয় প্রতি বছরের মতই।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি পুনর্বহালের আদেশ-নামায় স্বাক্ষর করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ইরান-মার্কিন আলোচনা প্রসঙ্গে ইমাম খামেনেয়ী আরও বলেছেন, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এটা স্পষ্ট যে মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা ইরানের কোনো সমস্যারই সমাধান করবে না, আলোচনা ইরানের সমস্যা সমাধান করতে পারে এমন ভান করাও তাদের উচিত নয়।
তিনি বলেছেন, ২০১০-এর যে দশক সেই দশকে দুই বছর ধরে মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েছিল ইরান কিন্তু এর ফল ছিল শূন্য, ইরানের পক্ষ থেকে ব্যাপক ছাড় দেয়া সত্ত্বেও মার্কিন সরকার তার সমস্ত অঙ্গীকার অমান্য বা পদদলন করে। ইরানের অর্থনৈতিক সংকটগুলো ও জনগণের রুটি-রুজির কোনো সমস্যাই মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনায় সমাধান হবে না, বরং এইসব সমস্যা সমাধানের পথ হল অঙ্গীকারবদ্ধ কর্মকর্তাদের উদ্যমী প্রচেষ্টা ও ঐক্যবদ্ধ জনগণের সহযোগিতা।
তিনি এ প্রসঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেন যে কিভাবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিভাবে দুই বছরের দীর্ঘ আলোচনার ফসল তথা পরমাণু সমঝোতাকে ছিন্ন-ভিন্ন করে দেন এবং এর আগেও মার্কিন সরকার সমঝোতা মেনে চলার অঙ্গীকার করা সত্ত্বেও তা মেনে চলেনি, সমঝোতা অনুযায়ী অনেক নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও সেসব নিষেধাজ্ঞা তো বাতিল করেইনি বরং জাতিসংঘের মাধ্যমে ইরানের ওপর সব সময় নিষেধাজ্ঞার খড়গ ঝুলিয়ে রেখেছে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা হিসেবে!
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, মার্কিন সরকারের সঙ্গে দুই বছরের আলোচনার অভিজ্ঞতা ও ইরানের পক্ষ থেকে অনেক ছাড় দেয়া সত্ত্বেও কোনো সুফল না আসার অভিজ্ঞতাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, মার্কিন সরকার যে কেবল ওই সমঝোতা লঙ্ঘন করেই যাচ্ছিল তা নয় একইসঙ্গে ওই সমঝোতা থেকে নিজের বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে, তাই এ রকম একটি সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে অযৌক্তিক, অসচেতনতাপূর্ণ ও অসম্মানজনক যা কখনোই করা ঠিক হবে না।
ইমাম খামেনেয়ী ইরানের ভেতরেই সংবাদ-পত্র ও কোনো কোনো ভার্চুয়াল মিডিয়ায় ও কোনো কোনো ব্যক্তির পক্ষ থেকে মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে আগ্রহ ও বিতর্ক থাকা প্রসঙ্গে বলেছেন, এইসব মহল মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করাকে একটি ভালো বিষয় হিসেবে উল্লেখ করছে এমনভাবে যেন আলোচনার ভালো হওয়ার বিষয়টি কেউ কেউ অস্বীকার করছে! আলোচনার বিষয়টি সবার ক্ষেত্রে ভালো হলেও মার্কিন সরকার এর ব্যতিক্রম বলে তিনি মন্তব্য করেন। ইসলামী বিপ্লবের নেতা এ প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, অবশ্য আমরা ব্যতিক্রমের তালিকায় ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর নাম আনব না, কারণ এই শাসকগোষ্ঠী কোনো সরকার নয় বরং একটি অপরাধী চক্র ও দেশ বা ভূমি-দখলদার মাত্র।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আশা প্রকাশ করেন যে ইরানের বিপ্লবী জাতি আগামী ২২ বাহমান তথা ১১ ফেব্রুয়ারিতে গোটা দেশজুড়ে অনুষ্ঠেয় ইসলামী বিপ্লবের ৪৬ তম বিজয়-বার্ষিকীর শোভাযাত্রায় ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য ও সহমর্মিতা আবারও প্রদর্শন করবে যা এই বিপ্লবের প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসা ও অঙ্গীকারবদ্ধতাকেই তুলে ধরে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।