দেবহাটার খলিশাখালিতে সেনাবাহিনীর অভিযান কালে গনপিটুনিতে ডাকাত সদস্য নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে তার পরিবার। গত রবিবার (১০ নভেম্বর) নিহত কামরুল ইসলাম গাজীর স্ত্রী মর্জিনা বেগম (৩৯) বাদী হয়ে দেবহাটা থানায় এ মামলা দায়ের করে।
বিতর্কিত ব্যক্তিদের নির্দেশে নিরাপরাধ মানুষদের জড়িয়ে হয়রানী করতে এ মামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, পত্রিকার সম্পাদক সহ ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০০/১৫০ জনকে অজ্ঞতানামা আসামি করা হয়েছে।
আসামি করা হয়েছে- কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান (৫৫), নলতা গ্রামের আনারুল ইসলাম (৫০), ইন্দ্রনগর গ্রামের আইয়ুব আলী শেখ (৩৫), একই এলাকার রবিউল ইসলাম বুল্লা (৪৫), শহীদুল ইসলাম (৪৭), দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়ার ফজলুর রহমান (৫৫), পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবু (৬০), দেবহাটা উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম (৬২), নোড়ারচক গ্রামের আনারুল ইসলাম (৪০), ইছাদ আলী মোড়ল (৬০), রবিউল ইসলাম (৪০), শওকত হোসেন (৫৫), বেজোরাটি গ্রামের আনারুল ইসলাম (৪০), চালতেতলা গ্রামের নূর আলী (৪৫), রামনাথপুর (মাঠপাড়া) আলীম গাইন (৫০), সখীপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম (৬২), আব্দুল আজিজ গাজী (৬২), শিমুলিয়া গ্রামের সুরুজ কাজী (৪৭), কাজী গোলাম ওয়ারেশ (৬৮), গোদাড়া গ্রামের মো. মহিউদ্দিন (৫৭), সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সাতনদী পত্রিকার সম্পাদক হাবিবুর রহমান (৫৯), সাতক্ষীরা সদরের তুজুলপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৫), তালার মাছিয়াড়া গ্রামের আব্দুল হালিম (৫৫) এর নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে।
তবে অভিযোগ উঠেছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও বিতর্কিত রঘু নাথ’র কুপরামর্শে সম্মানিত ব্যক্তিদের জড়িয়ে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। এমনকি ঘটনাস্থলে না থেকে অনেকে এ মামলায় আসামি হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা। উদ্দেশ্য প্রনোন্দিত ভাবে সমাজের বিশেষ ব্যক্তিদের ফাঁসিয়ে এ মামলা করা হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। দ্রুত তদন্তপূর্বক নিরাপরাধ মানুষদের অব্যহতি দিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এসব ব্যক্তিরা।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বাদীর পরিবার সহ অনেকে খলিষাখালির জমি খাস দাবি করে সেখানে বসাবাস করছেন। কিন্তু গত ১ নভেম্বর ভোরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে খলিষাখালি দক্ষিণপাড়ায় সৃষ্টি করে এলোপাতাড়ি মারপিট, ভাংচুর এবং তার স্বামী সহ আরো কয়েকজন আহত হয় বলে দাবি করেছেন মামলার এজাহারে। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই। পুলিশ ময়নাতদন্ত পরবর্তী মরদেহ হস্তান্তর করে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
তবে গত ১ নভেম্বর গনপিটুনিতে নিহত কামরুল গাজী (৫০) এর আগে ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর রাইফেল,৭ রাউন্ড গুলি ও ধারালো রামদাসহ গ্রেফতার হয়। সে সময় গ্রেফতারকৃত তিন ডাকাতসহ ৬ জনকে এজাহার নামীয় এবং আরও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে দেবহাটা থানায় দুটি পৃথক মামলা দায়ের করে পুলিশ।
এ বিষয়ে নলতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান জানান, গত ১ নভেম্বর ভোরে ওই এলাকায় সেনা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালালে সেখানে অবস্থান করা ডাকাতরা বোমা ফাটিয়ে ও দেশীয় হামলা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। এসময় সেখানে জনসাধারণ কয়েকজনকে গনপিটুনি দেয় বলে পরে জানতে পারি। আমাকে মিথ্যা ভাবে ফাঁসাতে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
কয়েকজন জমির মালিক জানান, ১৯৪৭ সালের দিকে জমির সিএস মালিক ইশ্বরচন্দ্র ঘোষের ছেলে চন্ডীচরণ ঘোষের ৪৩৯.২০ একর (এক হাজার তিনশত বিশ বিঘা) জমির মালিক হন দেবহাটার শিমুলিয়ার আব্দুল মালেক ওরফে মালেক কাজী। পরবর্তীতে তাদের উত্তরসূরি ও ক্রয়মূলে ২’শ ব্যক্তি খলিশাখালির ওই বিস্তৃর্ন সম্পত্তির মালিক হয়ে সেখানে চিংড়িঘের করে আসছি। কিন্তু খলিশাখালির বিস্তৃর্ণ মৎস্যঘের দখল, লুটপাট করায় কয়েক বছরে আমরা কোটি কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছি। সাতক্ষীরার কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ও বিতর্কিত ব্যক্তিরা এই জনপদকে উস্কানি দিয়ে একটি সন্ত্রাসীর অভয়আশ্রম গড়ে তুলেছে। আমরা এসব অপরাধীদের গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হযরত আলী জানান, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এ মামলায় যদি কোন নিরাপরাধ মানুষকে জড়ানো হলে তা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বাদ দেওয়া হবে। কোন মানুষকে অযাথা হয়রানি করা হবে না।