প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৪, ৪:৫৭ অপরাহ্ন
চলতি মৌসুমের শুরুতে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের কৃষকরা নানা প্রতিকূলতা পার করে রোপণ করেছেন আমন ধানের চারা। ইতোমধ্যে ধান ক্ষেত সবুজ আকার ধারণ করেছে। এরমধ্যে কিছু সংখ্যক ক্ষেতে শুরু হয়েছে ‘পাতা ব্লাস্ট’ রোগের আক্রমণ। এতে সবুজ ক্ষেত ধীরে ধীরে হলদে থেকে বাদামি রঙে পরিণত হচ্ছে। এ নিয়ে ফসল দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আমন ধানের ক্ষেতে পাতা ব্লাস্ট রোগের আক্রান্ত। কেউ বা বলেছেন এটি খোল পেড়া বা পঁচা রোগ। এর ফলে ধানের পাতা পচে বিনষ্ট হচ্ছে। এ রোগ প্রতিরোধে কিটনাশক প্রয়োগ করেও কাজে আসছে না বলে কৃষকদের অভিযোগ।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় ১ টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে ৮ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জীবন জীবিকার জন্য মতলব উত্তর উপজেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভশীল। এ উপজেলায় শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ জনসাধারণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি ফসল ঘরে তুলে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে চেষ্টা করে। এসবের মধ্যে সবচেয়ে লাভজনক ফসল হচ্ছে আমন ধান। আর আমন চারা রোপণের সময় প্রত্যেক বছরে বন্যা দেখা দিলেও এ বছরে তেমনটা প্রভাব পড়েনি। আমন চারা রোপণের বেশিরভাগ সময়ে খরার কবলে পড়তে হয়েছিল। অধিকাংশ কৃষক বাড়তি খরচে সেচ দিয়ে রোপণ করেছেন এই ধানচারা। এবার অধিক ফলনের আশায় ইতোমেধ্য পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ শেষের দিকে। এরই মধ্যে ধান ক্ষেত সবুজ রঙ ধারণ করায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা কৃষকের মুখে হাসি ফুটছিল। আর এই মুহূর্তে সেই হাসি যেন ম্লান হয়ে যাচ্ছে তাদের। বর্তমানে বেশ কিছু মাঠে দেখা দিয়েছে পোকামাকড়ের আক্রমণসহ পাতা ব্লাস্ট বা খোল পঁচা রোগের প্রাদুর্ভাব। এ কারণে ধান ক্ষেত এখন হলদে থেকে বাদামি রঙে পরিণত হয়েছে। কৃষকের স্বপ্নের ক্ষেত বিনষ্টের আশঙ্কা মাথায় বাজ পড়েছে।
ছেংগারচর পৌরসভার আধুরভিটি গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, এবার আমি ৪৫ শতাংশ জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। এর শুরুতে খরার কবলে সেচ দিয়ে চারা রোপণ করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত দামে শ্রমিক ও চারা ক্রয়সহ সার প্রয়োগ করেছি। এখন সেই ক্ষেত পঁচারি রোগ দেখা দিয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে কিটনাশক প্রয়োগ করেও কাজে আসছে না।
আরেক কৃষক আব্দুস সোবহান ও নাসার উদ্দিন জানান, ধান ক্ষেতে রোগবালাই দেখা গেলেও দেখা যাচ্ছে না কৃষি কর্মকর্তাদের। তাই দোকানিদের পরামর্শে কিটনাশক কিনে প্রয়োগ করছি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সারজমিন পরিদর্শনের শেষে এ ব্যাপারে মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, এটি ধানের ব্লাস্ট রোগ নয়, এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। পানির জমে থাকার কারণে হয়তো এ সমস্যাটা বেশি হয়েছে। বীজ বাহিত সমস্যার কারণে এটা হতে পারে। যেখান থেকে এই বীজটা সংগ্রহ করেছে ওই বীজে যদি পূর্বে এই রোগটা থেকে থাকে তাহলে এটা হতে পারে। আর এই রোগ গুলো বেশিরভাগ বিআর-১১ ধানের জমিতে হয়ে থাকে। আমার কৃষকদের প্রতি পরামর্শ থাকবে আপনারা বিআর-১১ ধানটা না করে আমনের বেশ কিছু ভালো জাত রয়েছে যেমন বিআর-৮৭, ৯২, ৯৫। এ ধানগুলোতে রোগে আক্রমণ কম হয়।
তিনি আরও বলেন, চারা অবস্থা থেকে ধান পাকার আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় এ রোগের আক্রমণ দেখা যায়। এ উপজেলার কিছু স্থানে ইতিমধ্যে এই রোগে আক্রমণের কথা জানতে পেরে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ধানে আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে কৃষকদের সর্তক করা হচ্ছে।