২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ পাকিস্তান গিয়েছিলেন। তার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উত্তেজনা ও অবনতির কারণে আর কোনো ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তান যাননি। প্রায় নয় বছর পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবার এসসিও বৈঠকে যোগ দিতে পাকিস্তানে গেলেন।
এর আগে গত বছর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) বৈঠকে যোগ দিতে ভারতে গিয়েছিলেন।
এদিকে ভারত ও পাকিস্তান—দুই দেশই জানিয়ে দিয়েছে, জয়শঙ্কর ইসলামাবাদে এসসিও বৈঠকে যোগ দিলেও কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে না। বিলাওয়ালও যখন ভারতে গিয়েছিলেন, তখনো কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়নি।
জয়শঙ্কর আগেই জানিয়েছেন, ‘এসসিও বৈঠক হলো বহুপক্ষীয় ইভেন্ট।
আমি ওখানে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি না। আমি সেখানে এসসিও সদস্য দেশের প্রতিনিধি হিসেবে যাচ্ছি। আমি একজন ভদ্র ও সুশীল মানুষ। আমি সে রকমই আচরণ করব।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভারত বা পাকিস্তান কেউই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য কোনো অনুরোধ করেনি। পাকিস্তান প্রটোকল অনুযায়ী জয়শঙ্করকে অভ্যর্থনা জানাবে।
এসসিও শীর্ষ বৈঠকের সময় কোনো ধরনের সহিংসতা বা অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তার জন্য ইসলামাবাদজুড়ে সেনা নামানো হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দলের বহু সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইমরানের দল পিটিআই আগে বিক্ষোভের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল।
এছাড়া এসসিও শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেওয়া নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাকিস্তান সরকার তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। স্কুল, কলেজ, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে। সেনা ও আধা সামরিক বাহিনী রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে। পার্লামেন্ট, দূতাবাস, বৈঠকস্থল, বিদেশি অতিথিরা যেখানে আছেন, সেখানকার নিরাপত্তার দায়িত্ব সেনার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং যখন ইসলামাবাদে পা দেন, তখন নিরাপত্তা লকডাউনের মধ্যে ছিল ইসলামাবাদ। ১১ বছর পর চীনের প্রধানমন্ত্রী আবার পাকিস্তানে গেলেন। এরপর চীনের প্রধানমন্ত্রী বেঅজিংয়ের অর্থে বানানো একটি বিমানবন্দরের উদ্বোধনও করেন।
ইসলামাবাদের এসসিও বৈঠকে চীনের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বেলারুশ, কাজাখস্তান, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। কিরগিজস্তানের মন্ত্রিসভার চেয়ারম্যান থাকবেন এবং ইরানের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট বৈঠকে যোগ দেবেন। এ ছাড়া পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করও থাকবেন। একই সঙ্গে বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রী এবং তুর্কেমেনিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন।
আর্থিক, বাণিজ্যিক, পরিবেশগত ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিষয়ে সহযোগিতা নিয়ে এ বৈঠকে আলোচনা হবে। এই সংগঠন কী কাজ করেছে তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এসসিও শীর্ষবৈঠক উপলক্ষে শেহবাজ শরীফ নৈশভোজের আয়োজন করেছেন। জয়শঙ্কর সম্ভবত সেখানে থাকবেন।
সাবেক কূটনীতিক অশোক সাজ্জানহার এনডিটিভিকে বলেছেন, ‘এসসিও হলো বহুপক্ষীয় সংগঠন। এখানে রোটেশন করে সব দেশ এই বৈঠকের আয়োজন করে। ২০১৭ সালের পর থেকে ভারত এসসিওর সব বৈঠকে যোগ দিয়েছে। কিন্তু সব সময়ই পররাষ্ট্রমন্ত্রী গেছেন। একবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী গিয়েছিলেন। তাই জয়শঙ্করই যে এসসিও বৈঠকে যাবেন, সেটা প্রত্যাশিত।’
তার মতে, ‘ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক স্বাভাবিক করা নিয়ে বল এখন পাকিস্তানের কোর্টে। ভারত স্পষ্ট করে বলেছে, ২০১৯ পুলওয়ামা ও তারপর বালাকোটের পর আলোচনা ও সন্ত্রাসবাদ একসঙ্গে যেতে পারে না। কিন্তু এরপর পাকিস্তান কোনো গঠনমূলক পদক্ষেপ নেয়নি।’
তিনি আরো জানান, ‘৩৭০ ধারা বিলোপের পর পাকিস্তান হাইকমিশনকে প্রত্যাহার করে নেয়। ভারতও একই কাজ করে। পাকিস্তানের সঙ্গে ৩৭০ ধারার কোনো যোগ নেই। এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ফলে সম্পর্ক ভালো করতে গেলে পাকিস্তানকে আগে পদক্ষেপ নিতে হবে।’