ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা ভারী বর্ষণ বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যায় প্রাবিত হওয়া পানি কমলেও ভোগান্তি যেন বাড়ছে। সম্প্রতি পাহাড়ি ঢলে প্রাবিত হওয়া পানি কমে গেলেও নিম্ন অঞ্চলের পানি নামছে ধীরগতিতে।
এতে রাস্তা ঘাট ঘর বাড়ি বিপর্যয় হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে নানা রোগ। সব চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগির গো-খাদ্যের।
ফুলপুর উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের মধ্যে ছনধরা, সিংহেশ্বর, রামভদ্রপুর, ফুলপুর সদর, রূপসি, বওলা ও বালিয়া ইউনিয়ন গূলোতে এখনও পানি রয়েছে। ফসলি জমি ফিশারির মাছ কোনো কিছুই রক্ষা করতে পারেননি মৎস্য খামারি ও সাধারণ কৃষকেরা।
উপজেলার ছনধরা ইউনিয়নের হাট পাগলা গ্রামের জাকির হোসেন বাবু জানান, বাড়ির সাথে ৪ একর জমির মধ্যে একটি ফিশারি ছিল। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বন্যার পানিতে তলিয়ে মাছ ভেসে গিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার মতো তার আর কিছুই নেই বলে জানান তিনি।
সিংহেশ্বর ইউনিয়নের ধনারভিটা গ্রামের আব্দুল হাকিম জানান, আমন চারা রোপনের পর ৫০ শতাংশ জমিতে শসা চাষ করতে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে। ফুল- কড়া শুরু অবস্থায় পানিতে তলিয়ে সমস্ত ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। ফসলি জমির এক মুঠো ধান ঘরে তোলার কোন আশা নেই। পরিবারের সাত সদস্যের খাদ্যের জোগান সব মিলিয়ে যেন হতাশা বিরাজ করছে।
পুড়াপুটিয়া গ্রামের গরু খামারি ছায়েদুল ইসলাম ও সেকান্দর আলী জানান, বসত ঘরে-গোয়াল ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। আমাদের নামা এলাকা পানি কমে ধীরগতিতে এখনও দুর্ভোগে আছি। ঘরে কিছু খাবার থাকলেও দেখা দিয়েছে গো- খাদ্যের সংকট। মানুষের খাবারের চাইতে গরু-ছাগল নিয়ে এখনও বিপদে আছি।
বন পাড়া গ্রামের কৃষক শরাফ উদ্দিন বলেন, ১০ একর জমিতে আমন ধান চাষ করে তার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ। বন্যার পানিতে ফসল নষ্ট হয়েছে।
তালুকদানা গ্রামের নুরুল ইসলাম, আলাল উদ্দিন, রুবেল মিয়াসহ আরও অনেকেই জানান, শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি ঘর থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও রাস্তাঘাট তলিয়ে আছে। ১ সপ্তাহ হয়ে গেল ঘরে তেমন কোন খাবার নেই। বাজারে যেতে হয় কোমর সমান পানির মধ্য দিয়ে।
ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদ এ. বি. এম. আরিফুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। আকস্মিক বন্যা দুর্গত মানুষের কষ্টের শেষ নেই। কেড়ে নিয়ে গেছে সব কিছু যা স্বচক্ষে না দেখলে বোঝা যায় না। বন্যা দুর্গতদের জন্য সরকারি, বেসরকারি, স্বেচছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংগঠনসহ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।