বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ৮ কার্তিক ১৪৩১
 

ডিবি হারুন ও তার স্ত্রীসহ ১২ জনকে দুদকে তলব    সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ, ২৬ শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার     ঢাকা থেকে ৫ রুটের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা    বিসিএসে সর্বোচ্চ ৩ বার অংশ নেয়া যাবে     ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে ১৪ জেলায় জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা    ব্যাংকগুলোর সম্পদ মূল্যায়নের কাজ শুরু হবে নভেম্বরে: গভর্নর    গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ তিনজনকে অব্যাহতি   
খাদ্য সংকটে ভুগছে প্রায় পাঁচ শতাধিক বানর
বানরের উপদ্রপে অসহায় কাপাসিয়ার ৭ গ্রামের মানুষ
এ এইচ সবুজ, গাজীপুর
প্রকাশ: বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০২৪, ৭:১৯ অপরাহ্ন

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সদর ও দুর্গাপুর ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের বাসিন্দারা বানরের উপদ্রপে অসহায় জীবন যাপন করছেন। প্রায় পাঁচ শতাধিক বানর বন থেকে লোকালয়ে এসে খাবারের সন্ধানে ছুটে বেড়াচ্ছে। 

দুই ইউনিয়নের ওই বিশাল এলাকায় ফল ও ফসল রক্ষা করতে জনসাধারণ দলবদ্ধ বানরগুলোকে তাড়াতে গিয়ে গত এক মাসে প্রায় ২০ জন মানুষ বানরের মারাত্মক আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এই সাত গ্রামের ফসলের মাঠে বানরের কারণে কোনো ধরণের ফল, ফসল ও শাক সবজি উৎপাদন করা যায় না। ফলে ওই এলাকার লোকজন বানরের অত্যাচারে স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারছেন না। অন্যদিকে খাদ্য সংকটের কারণে বিপুল সংখ্যক বানরেরা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানি ও অপুষ্টিতে ভোগছে। এলাকাবাসী এ সমস্যার সমাধান চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে আবেদন জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের বরাইদ, দড়িমেরুন, পানবরাইদ, রাওনাট ও দুর্গাপুর গ্রামে এবং কাপাসিয়া সদর ইউনিয়নের নাকাসিনি ও পাঁচরুখি গ্রামে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক বানর দলবদ্ধ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এক সময় এসব বানরেরা ওই এলাকার বিশাল বিশাল বনে ও জঙ্গলে অবস্থান করলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খাদ্য সংকটের কারণে এরা লোকালয়ে চলে এসেছে। 

এ ব্যাপারে রাওনাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতিরি সাবেক সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম আঙ্গুর জানান, বন- জঙ্গলে খাদ্য সংকটের কারণে বাড়ি বাড়ি এসে ঘরের দরজা খোলা থাকলে মূহুর্তের মাঝেই রান্না করা ভাত তরকারি, ধান, চাল, মুড়ি, ফলমূল, শাক সবজিসহ যে কোনো খাদ্য সামগ্রী নিয়ে চোখের পলকেই বানরেরা চম্পট দিচ্ছে। 

তিনি আরো জানান, এমনকি খাবার রান্নার সময়ে  গৃহিনীরা রান্নাঘর থেকে এদিক-সেদিক গেলে অথবা একটু অন্যমনস্ক হলেও নিমিষেই খাবার নিয়ে উধাও হয়ে যায় বানরেরা। খাবার ঘরের দরজা খোলা থাকলে বানরেরা খাবার নিয়ে চলে যায় এবং গাছে কিংবা ঘরের চালে বসে সে খাবার খেয়ে পাতিল ফেলে দেয়। 

গত এক মাসে রাওনাট গ্রামের দুইজন শিশু ও দুইজন নারীসহ অন্তত এগারোজন ব্যক্তিকে বানরের দল আক্রমণ করেছিল। এদের মাঝে দুইজন শিশু ও একজন নারীকে বানরেরা কামড় দিয়ে ও খামচিয়ে ক্ষত বিক্ষত করলে হাসপাতালে নিয়ে ইনজেকশন দিতে হয়েছে। একজন নারী বানর দলের আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে দৌড় দিলে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙ্গে যায়। তাছাড়া প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ বানরের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।

বরাইদ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য দিলীপ কুমার ধর (৬৫) জানান, তাদের এলাকায় সাতটি গ্রামে প্রায় পাঁচ শতাধিক বানর বসবাস করে। এ এলাকার উর্বর জমিতে চাষাবাদ করলে সব ধরণের শাক সবজি ও ফলমূল প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয়। অথচ বানরের কারণে তারা বেল, চালতা ও সিম ছাড়া অন্য কোনো ফল ও ফসল উৎপাদন করে সেগুলো পরিপক্ক করে ঘরে তুলতে পারেন না। এ কারণে তাদেরকে সব ধরণের ফল, ফসল ও শাক সবজি বাজার থেকে কিনে খেতে হয়। 

একই গ্রামের মুদি দোকানী বিপুল (৩০) জানান, তাদের এলাকায় মুদি দোকান কিংবা টং দোকানের সামনের অংশে মালামাল ঝুলিয়ে রাখা যায় না। বানরের উপদ্রপের কারণে সাটারের পরে সামনের অংশে চিকন লোহার নেট কিংবা প্লাস্টিকের নেট দিয়ে মালামাল আটকিয়ে রাখতে হয়। দোকান বন্ধ করে কোথাও গেলে বানরেরা যে কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দোকানের মালামাল বের করে খেয়ে ফেলে। 

একই গ্রামের চাকুরীজীবী যুবক শোভন চৌধুরী জানান, বাজার অথবা দোকান থেকে কেনাকাটা করে বাড়ি যাবার পথেও অনেক সময় ক্ষুধার্ত বানরেরা তাদের জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। বানরের কারণে তারা গোসল করে বাড়ির উঠানে জামা কাপড় শুকাতে পারেন না। তাছাড়া তাদের এলাকার অধিকাংশ টিনের ঘরের চালে শত শত বানর দল বেধে দিন রাত ছুটাছুটির কারণে ঘরের টিন ও কাঠ নষ্ট হয়ে যায়। নানা সময় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে এলাকাবাসী আবেদন জানালে হয়ত সাময়িক খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। 

কিন্তু এতে করে পরবর্তী সময়ে বানরেরা আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠে। যদি এদের স্থায়ীভাবে অন্য কোনো বৃহৎ বনে পুনর্বাসন করা হতো অথবা এই সাতটি গ্রামের বিভিন্ন জঙ্গলের কাছে ঘর বানিয়ে সেখানে দৈনিক খাবারের স্থায়ী ব্যবস্থা করা যেত তবে একদিকে বানরগুলো যেমন সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারতো, তেমনি গ্রামের মানুষগুলোও শান্তিতে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারতো।

এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম লুৎফর রহমান জানান, বনবিভাগের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিপুল সংখ্যক এ বানরগুলোর পুণবার্সনের ব্যবস্থা করে  জনসাধারণের দুর্ভোগ লাগবে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।


« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172. বাণিজ্যিক বিভাগ : +8801868-173008, E-mail: dailyjobabdihi@gmail.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft