নোয়াখালীর সূবর্ণচরে পাচারের অভিযোগে ট্রাকসহ ১৩ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার আটক করেছে স্থানীয় জনতা। পরে খবর পেয়ে সারগুলো উদ্ধার করলেও প্রভাবশালীদের যোগসাজশে তা ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) থানা থেকে সারসহ ট্রাকটি ছেড়ে দেওয়া হয়। এর আগে সোমবার (২৬ আগস্ট) উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের আক্তার মিয়ার হাটে ২৬০ বস্তায় (১৩ টন) সারসহ ট্রাকটি আটক করে স্থানীয় জনতা।
স্থানীয় অধিবাসী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ভোরে ট্রাকভর্তি সার নিয়ে যাওয়ার সময় সন্দেহ হলে বাজারের গার্ডসহ আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞেস করলে ড্রাইভার এলোমেলে কথা বলেন। কৃষি কর্মকর্তাকে জানানোর পর তিনি এ সার অবৈধ বলে পুলিশকে জানানো জন্য বলেন। আমরা থানায় ফোন দিলে পুলিশ ট্রাকটি থানায় নিয়ে যায়। পরে শুনেছি পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড গত রোববার (২৫ আগস্ট) সূরর্ণচরের হারিচ চৌধুরী বাজারের চাষি স্টোরের নামে ১০টন (২০০ বস্তা) ও আক্তার মিয়ার হাটের মা এন্টার প্রাইজের নামে তিনটন (৬০ বস্তা) ইউরিয়া সার (চালান নম্বর-৮৫৯১৬) উত্তোলন করা হয়। পরে সারগুলো চরজুবলী ইউনিয়নের হারিচ চৌধুরী বাজারের না রেখে ৪০ কিলোমিটার দুরে মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের হেমায়েত মার্কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ট্রাকভর্তি (চট্ট মেট্রো-ট ১১-৬৫৮৪) ১৩টন সার আটক করা হয়। তবে স্থানীয় প্রভাবশালীরা কৃষি বিভাগসহ সবাইকে ম্যানেজ করে সারগুলো থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
স্থানীয়দের দাবি, দেশের বাজার থেকে অধিক দাম পাওয়ায় আগেও এ রুটে ইউরিয়া সার মিয়ানমারে পাচার করা হয়েছে। নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর প্রভাবখাটিয়ে পূর্ব চরবাটা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবদুর রহমান স্থানীয় কৃষি বিভাগের যোগসাজশে এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। এখন বন্যার সময় কৃষকের সব ফসলি জমি ভেসে গেলেও ওই সিন্ডিকেট ১৩টন সার উত্তোলন করে পাচারের চেষ্টা করছিল। প্রতি ইউনিয়নে সারের ডিলার থাকলেও কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে কীভাবে চরজুবলীর সার ৪০ কিলোমিটার পার হয়ে মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে গেল তা খতিয়ে দেখা দরকার।
ট্রাকচালক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, সারগুলো হারিচ চৌধুরীর বাজারের হলেও হেমায়েত মার্কেটে আলা উদ্দিনের দোকানে নামিয়ে দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু যার নম্বর দেওয়া হয়েছিল তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই স্থানীয়রা সন্দেহ করে ট্রাকটি আটক করে।
এ বিষয়ে জানতে পূর্ব চরবাটা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবদুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করে রঙ নাম্বার বলে কেটে দেন। পরে ফোন করা হলে আর ধরেননি।
চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কাওছার আলম ভূঁইয়া বলেন, সারসহ ট্রাক আটকের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তার কথামতো সারগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে অন্যকোনো কিছু ভাববার সুযোগ নেই।
সূবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘এগুলো আমাদের সূবর্ণচর উপজেলার সার তা সঠিক কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে সারগুলো কীভাবে এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে গেল তা তদন্ত করা হচ্ছে। অনিয়ম প্রমাণ হলে ডিলারশিপ বাতিল করা হবে।’
থানায় আটক সার বৈধ স্বীকৃতি দেওয়া হলো কেন? জানতে চাইলে সাক্ষাতে আলাপের কথা বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন ওই কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল আমিন সরকার বলেন, ‘কৃষি কর্মকর্তার তথ্যে ভিত্তিতে থানা থেকে সার ছেড়ে দিতে বলেছি। বিষয়টি আমরাও খতিয়ে দেখছি।’
জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মীরা রানী দাস বলেন, ‘সার নিয়ে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। সূবর্ণচরে কেন এমন হলো তা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সারের ঘটনায় তদন্ত করে দোষী প্রমাণিত হলে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।