লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বিভিন্ন সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সাথে সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েনের ঘটনায় সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গতকাল বুধবার (৭আগস্ট) রাত ১২ টার পর থেকে বৃহস্পতিবার (বিকেল ৫ টা) পর্যন্ত স্থানীয়দের সাথে কথা বলে আতঙ্কের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা গেছে, কুচলিবাড়ী ইউনিয়ন সীমান্তের কলসিরমুখ, লক্ষনাথের কামাত, পাটগ্রাম ইউনিয়ন সীমান্তের জিমনাল, কাইতারবাড়ি, গাটিয়ারভিটা, উপজেলার বাউরা ইউনিয়ন সীমান্তের জমগ্রাম, সফিরহাট, ম্যাচেরঘাট, জোংড়া ইউনিয়ন সীমান্তের রামকান্ত, গুরুপাড়া, ধবলগুড়ি, শ্রীরামপুর ইউনিয়ন সীমান্তের কাঠাতলী, পকেট ও বুড়িমারী ইউনিয়ন সীমান্তের কামারেরহাট, বুড়িমারী স্থলবন্দর সীমান্ত এলাকা এবং দহগ্রাম ইউনিয়ন সীমান্তের চারদিকে ওপারের সীমান্তে বিএসএফ সদস্যদের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে পাহারায় রাখা হয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, ভারতীয় সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে এবং অনুপ্রবেশ ঠেকাতে অতিরিক্ত সেনা সদস্য মোতায়েন করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এতে সীমান্তবর্তী গ্রাম এলাকায় বসবাসরতদের মধ্যে গত দুইদিন ধরে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, একাধিক সীমান্তে বিএসএফের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচ্চ আলোর শত শত লাইট বুধবার রাত ১১ টার পর থেকে রাত ৩ টা পর্যন্ত বন্ধ করে রাখে সে দেশের কর্তৃপক্ষ। এ সময় সীমান্তে শত শত গাড়ি চলাচল করতে থাকে। মানুষের শোরগোল শোনা যায়। এসব কারণে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পাটগ্রাম শহরের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা সুজন বলেন, সীমান্তে এত সময় নিয়ে ভারতের লাইট বন্ধ হয় দেখি নাই। গতকাল রাতে বন্ধ হওয়ার পর অতিরিক্ত বিএসএফের টহল দেখে সীমান্ত হতে ৪ কিলোমিটার দূরে পরিচিত আত্মীয়ের বাসায় এসে আশ্রয় নিই এবং সারারাত আতঙ্কে ঘুম হয় নি।
অপরদিকে বুড়িমারী স্থলবন্দরের ওপারে চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর ভারতের আমদানি-রপ্তানিকারকেরা বাংলাদেশে পণ্যবাহী গাড়ী অনেক কম পাঠাচ্ছেন। গত দুই দিনে অন্যান্য দিনের তুলনায় ছয় ভাগের একভাগ গাড়ী বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিতে নিয়োজিত গাড়ীও কম গেছে। গত ৬ আগস্ট কোনো প্রকার আমদানি-রপ্তানি হয়নি।
পাশাপাশি বুড়িমারী পুলিশ ইমিগ্রেশন সকল প্রকার যাত্রী পারাপারে নজরদারি বাড়িয়েছে। বুড়িমারী স্থলবন্দরের শূন্য রেখায় বিজিবি চেকপোস্টে নিরাপত্তা বাড়িয়ে যাত্রীদের বিস্তারিত জেনে যাওয়া আসার অনুমতি দিতে দেখা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) বিকেলে কুড়িগ্রামের নাগেশরী উপজেলার আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক জাহেদুল ইসলাম সবুজ বুড়িমারী স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় বুড়িমারী বিজিবি কোম্পানির সদস্যদের সন্দেহ হলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আটক করেন। পরে তাঁকে পাটগ্রাম থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হবে বলে জানায় বিজিবি কর্তৃপক্ষ।
বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের (কাস্টমস) সহকারী কমিশনার এ এস এম আকরাম সম্রাট বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে আমাদের কাস্টমের কার্যক্রম চলমান আছে। কোনো সমস্যা নেই। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা কম গাড়ি পাঠাচ্ছেন। উনারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন হয়তো। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ স্বভাবিক হবে।
সীমান্তে কড়াকড়ির ব্যাপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রংপুর ৬১ (তিস্তা-২) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ মোহাম্মদ মুসাহিদ মাসুম বলেন, যে কোনো দেশে একটা প্রবলেম হলে প্রতিবেশী দেশ গুলো অ্যালার্টে থাকে। সে হিসেবে তাঁরা বাড়তি আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ও অফিসিয়ালি উনাদের (বিএসএফ) সাথে কথা বলেছি, কোনো প্রকার অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি। আমাদের সীমান্তে নিরাপত্তা ডিউটি আগের চেয়ে আরো জোড়দার করা হয়েছে। মানুষ নির্বিঘ্নে থাকতে পারে। দু'একটা লোক গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে। অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হয়, সীমান্তে বিজিবি পুরোপুরি সক্রিয় আছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য ডিউটি পালনের তথ্য প্রমাণ দিতে পারলে আমরাও এটা নিয়ে কাজ করতে পারবো।