ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিগ্রীরচর ইউনিয়নে পদ্মা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে ভাঙ্গন চলছে ডিগ্রীরচরের পালডাঙ্গী গ্রামে, এরই মধ্যে বিলীন হয়েছে ফসলের জমি ও বেশ কিছু বাড়িঘর।
জিও ব্যাগ ও সেন্ট সিমেন্ট ব্যাগ ফেলেও রোধ করা যাচ্ছে না ভাঙন। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা। নিঃস্ব মানুষ এখন আশ্রয় খুঁজতে মরিয়া। হুমকিতে রয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্প সহ ২ শতাধিক বাড়িঘর।
গত অর্থবছরের শেষের দিকে এই ভাঙন ঠেকাতে প্রায় আড়াই কোটি টাকার জিও ব্যাগ ও সেন্ট সিমেন্ট ব্যাগ ফেলা হলেও তা কোনো কাজে আসেনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, নদী ভাঙন রোধে ওই এলাকায় ভাঙনকবলিত সাড়ে ৮০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। বরাদ্দ কম আসায় ১৯২ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ও সেন্ট সিমেন্ট ব্যাগ ফেলা হয়। ২ কোটি ২২ লাখ টাকার ব্যয়ে ৪১ হাজার ৯৮৬ বস্তা জিও ব্যাগ ও ৪ হাজার ৯৮৯ বস্তা সেন্ট সিমেন্ট ব্যাগ ফেলা হয়। গত ১৫ জুন কাজ সমাপ্ত হয়।
নদী পাড়ের বাসিন্দা রেহেলা আক্তার বলেন, নদীতে আমাদের বাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। এখন সরকারের দেওয়া এই বাড়িতে থাকি। জিও ব্যাগ ফেলার এক মাসের মধ্যেই দেখা দেয় ভাঙন। ভাঙনে কিছু অংশ বিলীনও হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে জিও ব্যাগ ফেলায় ভাঙনরোধে কোনো কাজে আসেনি। এখন এখানে ভালো কাজ না করলে সরকারের দেওয়া শেষ আশ্রয়টুকু থাকবে না।
আরেক বাসিন্দা জাকারিয়া মোল্লা বলেন, জিও ব্যাগ ফেলার মধ্যে অনিয়ম ছিল। নামমাত্র কাজ করা হয়। এখানে সেখানে ব্যাগ ফেলা হয়েছে, কাজ চলাকালেই কিছু বস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এই কাজ আমাদের কোন কাজে লাগেনি। ওই পালের মতন সিসি ব্লক ফেললেই রক্ষা পাবো আমরা।
পদ্মার পাড়ের বৃদ্ধা বাসিন্দা বিলকিস খাতুন বলেন, এই ভাঙনের জন্য কয়েক দিন আগে আমার বসতবাড়ি সরিয়ে নিয়েছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর ফাঁকা ছিল, তাই এখানে থাকছি আপাতত। ভাঙন ঠেকানো না গেলে এখানেও থাকতে পারবো না। এখন শুধু স্থায়ী বাঁধ করলে আমাদের রক্ষী।
ডিগ্রীরচর ইউনিয়ন ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু বলেন, ভাঙনের বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। যাদের বসতবাড়ি হুমকিতে ছিল তাদের ঘরগুলোকে সরিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ফাঁকা থাকা ঘর গুলোতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পাউবোর ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, বরাদ্দ কম আসায় কিছু অংশের কাজ করা হয় পরীক্ষামূলকভাবে। কিন্তু দেখা গেলো এভাবে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, কেবল স্থায়ীভাবে সি সি ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে। কাজ করার সময়ও ভাঙনে কিছু অংশ বিলীন হয়ে গেছে। তবে কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। স্থায়ীভাবে বাঁধের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।