প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০২৪, ৬:০২ অপরাহ্ন
বর্ষার ভরা মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কৃষকেরা চলতি আমন মৌসুমে পানি কিনে জমি চাষ করে ধান রোপন করার খরচ যোগাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। বোরো আবাদের তুলনায় আমন চাষে তেমন কোন খরচ করতে হয় না। তবে র্বতমানে খরাপূর্ণ আবহাওয়ায় অনাবৃষ্টিতে কৃষকদের সেচের পানি কিনে জমি চাষ করতে হচ্ছে।
অপরদিকে সার ও কৃষাণ খরচ বাড়ায় অতিরিক্ত ব্যায় করতে হচ্ছে কৃষকদের। অতিরিক্ত উৎপাদন খরচের বোঝা মাথায় নিয়েই আমন চাষ করছেন অনেক কৃষক। অনেকে আবার পানির টাকা দিতে না পেরে বৃষ্টির অপেক্ষায় জমি অনাবাদি ফেলে রেখেছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত অনেক জমি পানির অভাবে অনাবাদি পড়ে রয়েছে। কৃষকেরা সেচের পানির দাম বেশি হওয়ায় জমি চাষ করতে পারছেন না।
উপজেলার খাঁনপুর ইউনিয়নের ন্যাটাশন গ্রামের কৃষক পাথরাজ জানান, সার ও সেচের দাম বাড়ার ফলে চাষাবাদের খরচও বেড়েছে। ধানজুড়ী মিশনের অধীনস্থ গভীর নলকূপে গত ইরি-বোরো মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে সেচের দাম দিতে হয়েছে ১৮’শ টাকা করে এবং আমনে ২’শ টাকা ঘন্টায় পানি কিনতে হচ্ছে।
একই ইউনিয়নের বেলপুকুর গ্রামের কৃষক বাবু পাহান জানান, তিনি মকছেদুল ও ইউপি চেয়ারম্যানের বাবা নবিন্দ্রনাথ পাহান এবং ভাই হিতেন পাহানের নলকূপ এলাকায় মোট ১৪ বিঘা জমিতে ধানচাষ করেন। চলতি মৌসুমে সেগুলোতে সেচের জন্য বিঘা প্রতি অগ্রিম ১ হাজার টাকা নিয়ে পানি দিচ্ছেন নলকূপ মালিকরা। ধান রোপনের পরে বৃষ্টি না হলে পানি নিতে আরো ৫’শ টাকা করে দিতে হবে বলেও জানান তিনি। এর আগে গত বোরো মৌসুমে জমি গুলোতে প্রতি বিঘায় ১৮’শ থেকে জমির প্রকারভেদে ২৫’শ টাকা পর্যন্ত পানির দাম আদায় করা হয়েছে।
ন্যাটাশন গ্রামের আরেক কৃষক জোসেফ জানান, গত ইরি-বোরো মৌসুমে বরেন্দ্র সেচ এলাকার কৃষকদের কার্ড সিস্টেমে পানি নিতে বিঘা প্রতি জমির প্রকারভেদে ২৫’শ থেকে ৩ হাজার টাকার অধিক খরচ গুনতে হয়েছে। এর মধ্যে অপারেটর র্চাজ (হ্যান্ডেল ভাড়া) বাবদ ৮’শ টাকা করে নেওয়া হয়েছে এবং এই মৌসুমে ঘন্টায় ২’শ টাকা করে পানির দাম নেওয়া হচ্ছে।
কৃষকদের বর্ণনা মতে, বর্তমানে এক বিঘা জমি চাষে মোট খরচ হচ্ছে প্রায় ৮ থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ধান পাওয়া যাবে ১৪-১৬ মণ। ধান কাটার খরচ সহ হিসাব করলে ধানের বাজার অনুযায়ী কৃষকের উৎপাদন খরচ উঠে না। এমতাবস্থায় কৃষকের পক্ষে চাষাবাদ চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে বলে জানান তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণ কমল রায় জানান, বিরামপুর উপজেলায় এবার ১৭ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে আমন রোপনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক জমিতে আমনের চারা রোপন করা হয়েছে। বাকি গুলোতে পানির অভাবে রোপন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তবে সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে জমিতে পানি দেওয়ার জন্য বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও নলকূপ মালিকদের বলা হয়েছে।