বৃহস্পতিবার ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ১৫ কার্তিক ১৪৩১
 

আবারও নেপালকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ    রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্য আমদানি করবে সরকার    ৮ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ    খরচ কমেছে হজের দুই প্যাকেজের    ৩৫ প্রত্যাশীদের আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জ    চাকরির বয়সসীমা ৩৫ চেয়ে ফের আন্দোলন    দেশে শেখ হাসিনা ও আ.লীগের জায়গা হবে না: ড. ইউনূস   
সন্তান হারানো মায়দের আহাজারী থামছেই না
ঝিনাইদহের সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিব হত্যার দায় কার?
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
প্রকাশ: রোববার, ২৮ জুলাই, ২০২৪, ৫:৪০ অপরাহ্ন

ছেলে হারানোর শোকে বিভোর দুটি পরিবার। প্রতিটা রাত যেন দুই পরিবারের কাছে অবসানহীন অপেক্ষার প্রতিচ্ছবি। সারাক্ষন নিহত ছেলেদের স্মৃতি নিয়ে আহাজারী করছেন পরিবার। সাব্বির হোসেন (২৩) ও প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের (২৯) মায়েদের কান্না যেন থামছেই না। পেশায় দু'জনই বেসরকারী চাকরিজীবী ছিলেন। কোটা আন্দোলনের সময় ঢাকায় পৃথক স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তারা। 

এরমধ্যে শৈলকুপা উপজেলার মীর্জাপুর গ্রামের আমোদ আলীর ছেলে সাব্বির হোসেন গত ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরায় ওষুধ কিনতে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরদিন ১৯ জুলাই সাব্বিরের লাশ সকাল ১০টার দিকে মীর্জাপুর গ্রামে দাফন করা হয়। 

সাব্বিরের চাচাতো ভাই তরিকুল জানান, উত্তরার ১৩ নং সেক্টরে অর্গান লিমিটেড কেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করতেন সাব্বির। ঘটনার সময় তিনি ওষুধ কিনতে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। 

তিনি আরো জানান, সংসারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ২৩ বছরের যুবক সাব্বিরকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তাদের পরিবার। 

একমাত্র বোন সুমাইয়া খাতুন জানান, তার ভাই তো কোন দল করতেন না। তিনি চাকরী করে তাদের সংসার চালাতেন। তাহলে কেন এই নিরীহ ছেলেটিকে মারা হলো? এখন কে তাদের সংসার চালাবেন? কার কাছে বিচার চাইবেন তারা? 

মা রাশিদা খাতুন জানান, সাব্বিরের পিতা এখন কাজ করতে পারে না। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে সাব্বির সংসারের হাল ধরেছিলেন। সাব্বিরের মৃত্যুতে গোটা পরিবার এখন অহসায়। তিনি সন্তান হত্যার বিচার চান।

পিতা আমোদ আলী বলেন, তাঁর ছেলে কোনো রাজনীতি করতেন না। বাঁচার জন্য ঢাকায় গিয়েছিলেন চাকরী করতে। সেখানেও সাব্বির কোনো মিছিল-মিটিংয়ে যায়নি। জ্বর হওয়ায় অসুস্থ শরীরে ওষুধ কিনতে বাইরে যান। তিনি তো আন্দোলনে ছিলেন না। তাকে কেন গুলি করে হত্যা করা হলো? 

এদিকে ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ার সাবেক বিমান বাহিনীর মাষ্টার ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিকীর ছেলে প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান গত ১৯ জুলাই শুক্রবার রাতে গুলিতে নিহত হন। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিরপুর ১০ নং সেক্টর এলাকায় পথচারি এক নারীকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। মিরপুর-৬ এলাকায় ডাঃ আজমল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। রাকিব লন্ডন ভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানী টাইগার রিস্ক ম্যানেজমেন্টে চাকরী করতেন। শনিবার ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ায় প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনশান নীরবতা। রাকিবুলের ব্যবহারিক জিনিসপত্র নিয়ে ক্যান্সার আক্রান্ত মা হাফিজা খাতুন ক্রন্দন করছেন। পিতা আবু বকর বিমান বাহিনীর সাবেক মাষ্টার ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক বাকরুদ্ধ। বড় ভাইয়ের ছেলে ছোট্র শিশু রাফসান “ছোট বাবা” “ছোট বাবা” বলে সারা ঘর খুঁজে বেড়াচ্ছেন চাচাকে। মৃত্যুর কিছুক্ষন আগে রাকিবের সঙ্গে ছোট্ট ভাজিতা রাফসানেরও কথা হয়েছিল। নিহত হওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের সঙ্গে কথা হয় মা হাফিজার। বলেছিলেন তিনি একটি গ্যারেজের মধ্যে বসে আছেন। রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন। কিন্তু কিছুক্ষন পরই তার ছেলে চিরঘুমে শায়িত হন। শুক্রবার এশার নামাজ পড়ে ফোন দেন পিতা আবু বকর। কিন্তু ফোন বাজলেও আর কেউ ধরেনি। রাত ১১টার দিকে ছেলের ফোন থেকে কেউ একজন মৃত্যুর খবর
জানান। ভোর রাতে রাকিবের বন্ধু ফয়সাল ও পিয়াস লাশ ঝিনাইদহ শহরের পৌছে দেন। 

মা হাফিজা বেগম জানান, তার ছোট ছেলেকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল। মা বাবাকে কাছে রাখার জন্য ঢাকায় বড় ফ্ল্যাট নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমান হয়ে গেছে। 

প্রতিবেশি তাছলিম উদ্দীন জানান, নিহত রাকিব এলাকায় খুবই ভদ্র হিসেবে পরিচিত। তিনি জীবনে কোন সংগঠন করেছেন কিনা তা মহল্লাবাসির জানা নেই। একটি ভদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে সবাই রাকিবকে চিনতেন। রাকিবের মৃত্যুতে শহরের চাকলাপাড়া ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার বাসিদেবপুর গ্রামের মানুষ শোকে স্তদ্ধ হয়ে আছে। মৃত্যুর ১০দিন পরও সরকারী ভাবে পরিবারটির কেউ খোঁজ নেননি বলে জানান রাকিবের পিতা আবু বকর।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172. বাণিজ্যিক বিভাগ : +8801868-173008, E-mail: dailyjobabdihi@gmail.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft