যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ফের বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘন্টায় ভারী বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে যমুনার নদীর পানি সিরাজগঞ্জ ১০ সে.মি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বাড়ায় যমুনার অরক্ষিত ও চরাঞ্চলে তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। কোনক্রমেই ভাঙ্গন থামছে না। প্রতিদিন ভাঙ্গনে বসতভিটা, মসজিদ, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ফসলী জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
মানুষ নি:স্ব হয়ে পড়ছে। অনেকে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলে ভাঙ্গনরোধের চেষ্টা করলেও কোন কাজই হচ্ছে না। পাউবো বলছে, যমুনার ভাঙ্গনরোধ খুব সহজ কাজ নয়। তবুও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গাছপালা বিলীন হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চরম ব্যাহত হচ্ছে। কাজকর্ম না থাকায় ভাঙ্গন কবলিত পরিবার খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানায়, সোমবার সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৬৮ মিটার। গত ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১ দশমিক ২২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপদসীমা ১২ দশমিক ৯০ মিটার)। অন্যদিকে, কাজিপুর মেঘাই পয়েন্টে পানি সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৩০ মিটার। এ পয়েন্টে নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১ দশমিক ৫০ মিটার নিচ প্রবাহিত হচ্ছে (বিপদসীমা ১৪ দশমিক ৮০ মিটার)।
এদিকে, পানি বাড়ায় শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নে পাচিল, কৈজুরী, আড়কান্দি, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলার চর, কাজিপুর উপজেলার খাসরাজবাড়ী, ত ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনি ভাঙ্গন কাচা-পাকা বসতবাড়ী, ফসলি জমি, মসজিদ, হাসপাতাল, বিদ্যুতের খুটি, গাছপালা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গনকবলিতরা ঘরবাড়ী ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জায়গা না থাকায় স্তুপ করে রেখে পলিথিন বা ঝুপড়ি তুলে মানবেতরভাবে বসবাস করছে। ভাঙ্গনের হুমকি থাকা মানুষগুলো নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছে।
পাঁচিল গ্রামের বাসিন্দা আজগর আলীসহ অনেকে জানান, প্রচুর ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। চোখের সামনে চিরচেনা বসতভিটা ও জীবিকা নির্বাহের ফসলী জমি বিলীন হয়ে আমরা সকলেই নি:স্ব হয়ে যাচ্ছি। মুহুর্তের মধ্যেই একটি পরিবার ফকির হয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গনরোধে পাউবো কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহনই করছে না। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন না করা হলে শতশত বসতভিটা ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, পানি বাড়ায় পাঁচিলসহ কয়েকটি পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। আমরা জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙ্গন রোধে চেষ্টা করছি। কিন্তু যমুনার ভাঙ্গনরোধ সহজ ব্যাপার না। ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
তিনি আরো জানান, চরাঞ্চল খাসরাজবাড়ী ভাঙ্গনরোধে স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়ের সুপারিশে ১০ হাজার জিওব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। এছাড়াও যমুনার যেসকল পয়েন্টে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে আমরা সাধ্যমত ভাঙনরোধ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে অন্যান্য চরাঞ্চল ভাঙনরোধে প্রকল্প না থাকায় ব্যবস্থা যাচ্ছে না।