কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে মঙ্গলবার (২৫ জুন) বিক্ষোভ করেছেন কয়েক হাজার মানুষ। কর বাড়ানোর বিতর্কিত আর্থিক বিল পাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে পার্লামেন্ট ভবনে আগুন দেন বিক্ষোভকারীরা।
এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের চালানো গুলিতে এ পর্যন্ত ১০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, নাইরোবিতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার মধ্যে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে ধাওয়া দিয়ে পার্লামেন্ট ভবন থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। এরপর আগুন দেয় ভবনটিতে। পরে পুলিশ ফিরে এসে বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস এবং জলকামান ছোড়ে। তাতে কাজ না হওয়ায় গুলি ছোড়ে পুলিশ।
পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে অন্তত ৫ বিক্ষোভকারীর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন রয়টার্সের সংবাদকর্মী। ভিভিয়ান আচিস্তা নামের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, গুলিতে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন।
রিচার্ড এনগুমো নামের আরেক চিকিৎসক জানান গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করা বিক্ষোভকারী ডেভিস তাফারি রয়টার্সকে বলেন, আমরা পার্লামেন্ট বন্ধ করে দিতে চাই। প্রত্যেক এমপির পদত্যাগ চাই। তখন আমাদের নতুন সরকার হবে।
পুলিশ শেষ পর্যন্ত পার্লামেন্ট ভবন থেকে বিক্ষোভকারীদের তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ভূগর্ভস্থ টানেল দিয়ে আইনপ্রণেতাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আইনটি অনুমোদিত হয়েছে পার্লামেন্টে। আইনপ্রণেতাদের তৃতীয় ধাপের পর্যালোচনা শেষে স্বাক্ষরের জন্য বিলটি পাঠানো হবে প্রেসিডেন্টের কাছে। কোনো অভিযোগ থাকলে বিলটি পার্লামেন্টে ফেরত পাঠাতে পারবেন প্রেসিডেন্ট।
কয়েক দিন আগে দেশটির পার্লামেন্টে নতুন একটি আর্থিক বিল পাস করা হয়। জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকটে জর্জরিত দেশটির মানুষ নতুন এই কর বৃদ্ধির আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তারা দেশটির প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর পদত্যাগের দাবি তুলেছেন।
আইনটির প্রতিবাদে নাইরোবি ছাড়াও কেনিয়ার আরও কয়েকটি শহরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
কেনিয়ার ঋণের বোঝা হালকা করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ২৭০ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্যে নতুন আর্থিক বিল করতে চায় সরকার। দেশটির বার্ষিক রাজস্বের ৩৭ শতাংশই চলে যায় ঋণ শোধ করতে।
এদিকে গাড়ির মালিকানা, রুটি, রান্নার তেল এবং আর্থিক লেনদেনের ওপর প্রস্তাবিত নতুন কর বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রতিবাদকারীদের সন্তুষ্ট করার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। পুরো বিলটিই বাতিলের দাবি তাদের।
অপরদিকে সহিংসতা ও 'নির্বিচারে আটক' নিয়ে 'গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তার মুখপাত্র বলেছেন, বিক্ষোভে নিহত ও আহত হওয়ার খবরে জাতিসংঘ মহাসচিবও 'অত্যন্ত দুঃখিত'।
মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক সাংবাদিকদের বলেন, নির্বিচারে আটকের ঘটনা নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করার জন্য মানুষের অধিকার সমুন্নত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দুজারিক আরও বলেন, কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মৃত্যুর সব ঘটনা যেন পূর্ণ তদন্ত করা হয়।
গুতেরেস কেনিয়ার পুলিশ ও কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে সংযম প্রদর্শনের এবং বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।