সুনামগঞ্জে টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে ঈদ আনন্দ মাটি। জেলাটির সব নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের সড়ক ও বসতবাড়ি। গতকাল রোববার (১৬ জুন) রাতভর বৃষ্টি হওয়ায় বন্যা আতঙ্কে নির্ঘুম ছিলেন এ জেলার মানুষজন। আজ সোমবার (১৭ জুন) ভোর থেকে সুরমা নদীর পানি নদী উপচে সুনামগঞ্জ পৌরসভা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে জলাবদ্ধতা তৈরির পাশাপাশি অনেকের বাসা বাড়িতে ও দোকানে পানি ঢোকায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন। এদিন সকালেও বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঈদগাহে গিয়ে কোরবানি ঈদের জামাত আদায় করেছেন এ জেলার লাখ লাখ মানুষ। ফলে এবার ঈদের আনন্দ নেই কারও মনে।
এদিকে দুপুরের দিকে জেলার সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর পয়েন্ট দিয়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চলের সড়ক ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে জেলার বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, মধ্যনগর, ধর্মপাশা, জগন্নাথপুর, ছাতক দোয়ারাবাজার, জামালগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নতুনপাড়া, বাঁধনপাড়া, হাছননগর, শহীদ আবুল হোসেন রোড, আরপিননগর, তেঘরিয়া, উকিলপাড়া, ষোলঘর, শান্তিবাগসহ বিভিন্ন সড়কে পানি উঠেছে। জেলা শহরের নিম্নাঞ্চলের বাসা বাড়িতে পানি উঠেছে, অনেকের দোকানের জিনিসপত্র ভিজে গেছে। ভোর থেকেই কেউ কেউ দোকানের মালামাল ওপরে তুলছেন, কেউ কেউ স্থানান্তর করছেন। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও আবাসিক এলাকার ওপর দিয়ে পানি গিয়ে পড়ছে ঝাওয়ার হাওরে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণেই মূলত নদ-নদীর পানি বেড়েছে। রোববার (১৬ জুন) ৩০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। সুনামগঞ্জের বন্যা হয় চেরাপুঞ্জির বৃষ্টিপাতের ওপর। গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যেহেতু বৃষ্টি ২০০ মিলি মিটারের নিচে সেহেতু আমাদের জন্য ঝুঁকির নয়। সুনামগঞ্জে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে, সে জন্য পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন পাতারগাও গ্রামের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে সড়ক ডুবে গেছে। বসতবাড়িতে পানি ঢুকে যাবে যদি আরও একটু পানি বাড়ে। ঈদের আনন্দ নেই কীভাবে কী করব বুঝতে পারছি না যদি বন্যা হয়ে যায়।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কালীকৃষ্ণ পাল জানান, জেলা শহরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সে সব এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, অচিরেই ড্রেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, সোমবার ভোরে সুনামগঞ্জ সদর ও পৌরসভার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রীও রয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত ত্রাণ সামগ্রীর জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছি।