রাজধানীর গুলশান-বারিধারার কূটনীতিক এলাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে কাউসার নামের এক পুলিশ কনস্টেবলের গুলিতে আরেক পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম নিহত হয়েছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন জাপান দূতাবাসের এক গাড়িচালকও। এ ঘটনায় কনস্টেবল কাউসারকে হেফাজতে নিয়েছে গুলশান থানা-পুলিশ।
গতকাল শনিবার (৮ জুন) রাত ১২টার দিকে বারিধারায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা দুজন ফিলিস্তিন দূতাবাসের বাইরে অবস্থিত পুলিশ বক্সে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এ ঘটনায় একটি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই ফুটেজে দেখা যায়, ফিলিস্তিন দূতাবাসের নিরাপত্তাকর্মীদের ডিউটি কক্ষের সামনে উত্তেজিত কথাবার্তা হয় কনস্টেবল কাওসার ও মনিরুলের মাঝে। ওই সময় তারা ডিউটি খাতা নিয়ে কিছু একটা বলছিলেন। আচমকা কনস্টেবল কাওসার মনিরুলের দিকে খাতাটি ছুড়ে মারেন এবং কিছু বুঝে ওঠার ডিউটি কক্ষের ভেতর থেকে মনিরুলকে লক্ষ্য করে গুলি শুরু করেন কনস্টেবল কাওসার। পরে নিথর মনিরুলের অস্ত্রটি মাটি থেকে হাতে তুলে নেন কাওসার। নির্বিকার কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন মরদেহের পাশে। ওই সময় কাউসারের হাতে যে এসএমটি সাবমেশিনগান ছিল, সেটি ব্রাজিল থেকে আমদানি করা। ওই বন্দুক থেকে ৩৮ রাউন্ড গুলি ছোড়েন তিনি।
এ বিষয়ে পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ডিপ্লোমেটিক জোনে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ সদস্যদের হাতে ব্রাজিল থেকে আমদানি করা এসএমটি সাবমেশিনগান দেওয়া হয়। কারণ, এ অস্ত্র দিয়ে মিনিটে ৬০০ রাউন্ড গুলি করা যায়।
এ ঘটনায় জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেন আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে গুলি চালানোর সময় সড়কে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন মনির নামে এক পথচারী। তিনিও গুলিবিদ্ধ হন। তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত সাজ্জাদ পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় দেখেন এক পুলিশ সদস্য পড়ে আছেন। কনস্টেবল কাউসারের কাছে এর কারণ জানতে এগিয়ে গেলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। তখন গুলিবিদ্ধ তিনি।
এদিকে ঘটনার পর রাতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
রাত ২টা ৩০ মিনিটে আইজিপি সংবাদিকদের বলেন, ‘কনস্টেবল কাউসার আহমেদ উন্মাদের মতো এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আমরা কিছু গুলির খোসা ও ২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছি। আক্রমণকারী পুলিশ সদস্যকে নিরস্ত্র করে গুলশান থানায় নেওয়া হয়েছে। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। মনিরুল ইসলামের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘ঘটনার কারণ জানতে আমরা কনস্টেবল কাউসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করবো। প্রকৃত রহস্য জানাটা খুব কঠিন হবে না।’
কাউসারকে কীভাবে আটক করা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর কাউসার তার অস্ত্রটা রেখে ঘটনাস্থলের আশপাশে ঘোরাফেরা করছিল। তখন তাকে সেখান থেকেই আটক করা হয়।’
জানা যায়, নিহত কনস্টেবল মনিরুল ইসলামের বাড়ি নেত্রকোণা। তিনি ২০১৮ সালে পুলিশে যোগ দেন।