২০২২ এর বন্যার ক্ষত এখনো মুছে যায়নি। এই অবস্থায় নতুন করে ফের বন্যা আতঙ্কে সিলেটবাসী। ভারতের মেঘালয় থেকে আসা ঢলের কারণে সিলেটজুড়ে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। এতে ভয়াবহ বন্যার শঙ্কায় এ অঞ্চলের মানুষ।
আকাশে মেঘ জমলেই ৫০ বছর বয়সী তৈয়ব আলীর মনে শঙ্কা জাগে। তৈয়ব আলী জানান, ২০২২ সালের বন্যা কেড়ে নিয়েছে তার ফলানো কষ্টের ফসল আর মাথা গোজার ঠাঁই। তাই এবারও সিলেটজুড়ে বন্যার শঙ্কায় শঙ্কিত তিনি।
তৈয়ব আলীর মতোই মন ভার জেলার বেশিরভাগ খেটে খাওয়া মানুষের। কেননা, সীমান্তবর্তী মেঘালয়ে এরই মধ্যে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। যা রীতিমতো ঢল হয়ে নামে বাংলাদেশের নদ-নদীতে। এ বছরও তাই বন্যার আশঙ্কায় নতুন করে ভিটেমাটি তৈরি নিয়ে আতঙ্কিত অনেকেই।
জানা যায়, সিলেটে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর অন্তত ১৫ স্থানে ডাইক (নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ) ভেঙে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকা দিয়ে নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে অবিরাম বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর পানি বুধবার থেকেই ছিল বিপৎসীমার ওপরে। তবে এদিন রাতে ভারতের মেঘালয় থেকে আরও ঢল নামতে শুরু করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, কুশিয়ারা নদীর অন্তত ১৫ স্থানে নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ (ডাইক) ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এ ছাড়া অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকায় সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ চলছে। কিন্তু প্রবল স্রোতের কারণে ভাঙা ডাইক মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি জানান, কুশিয়ারার বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করলেও সুরমায় এখন পর্যন্ত কোথাও ভাঙনের খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন স্থানে নদী উপচে পানি প্রবেশ করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট উপজেলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার ওপরে ও কুশিয়ারা নদীর জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে ২০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং গোয়াইনঘাট উপজেলায় সারিগোয়াইন নদীর পানি ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, বুধবার রাতে সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে ৩৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। পাশাপাশি একই সময়ে জৈন্তাপুরের লালাখালে রেকর্ড হয়েছে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত।
জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানিয়েছেন, উপজেলার উঁচু এলাকা ছাড়া সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে, কোথাও কোথাও মানুষের বাড়ির চালা পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। রাতে প্রবল স্রোতে উদ্ধার অভিযান ভালোভাবে পরিচালনা করা না গেলেও ভোর ৪টা থেকে পুরোদমে উদ্ধার অভিযান চলছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, বন্যায় উপজেলার ৮০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। পর্যটন এলাকার পর্যটকবাহী নৌকা নিয়ে উদ্ধার অভিযান চলছে। উপজেলার ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অন্তত ২৫০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসাইন বলেন, জেলা ও উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেনাবাহিনীও এরইমধ্যে রেকি করে গেছে। প্রয়োজনে তারাও উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ বিতরণে যোগ দেবে।