ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে নৃশংসভাবে হত্যার অন্যতম অভিযুক্ত কসাই জিহাদ হাওলাদারকে ১২ দিনের হেফাজতে পেয়েছে কলকাতার গোয়েন্দা পুলিশ।
জিহাদ আরো জিজ্ঞাসাবাদ ও মরদেহের অংশ বিশেষ উদ্ধারে তাকে নিয়ে অভিযান চালাতে শুক্রবার তাকে উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের (সিজিএম) এজলাসে তোলা হয়।
সিআইডির আবেদনের ওপর শুনানি করে বিচারক শুভঙ্কর বিশ্বাস জিহাদকে ১২ দিনের হেফাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
জিহাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ, অপরাধমূলক নরহত্যা এবং তথ্য লোপাট, অর্থাৎ অস্ত্র ও মরদেহ পরিকল্পনা করে সরিয়ে ফেলার তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
সংসদ সদস্য আনারকে হত্যার পর দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলার কাজে জিহাদকে মুম্বাই থেকে ভাড়া করে আনা হয়। জিহাদ সেখানে কসাইয়ের কাজ করতেন।
কলকাতার ফ্ল্যাটে বাংলাদেশি এমপি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলে বৃহস্পতিবার ভোরে সিআইডি ও পুলিশের হাতে আটক হয় জিহাদসহ ট্যাক্সি ক্যাব চালক। জিহাদ প্রথমে নিজেকে সিয়াম পরিচয় দিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করলেও পরে আসল পরিচয় দেন।
আনার হত্যায় তিনজনকে ১০ দিনের রিমান্ডে চায় ডিবিআনার হত্যায় তিনজনকে ১০ দিনের রিমান্ডে চায় ডিবি
পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ স্বীকার করেছে যে, আখতারুজ্জামানের শাহিনের নির্দেশে তিনিসহ চারজন মিলে এমপি আনারকে ফ্ল্যাটে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
এরপর তারপর ওই ফ্ল্যাটের মধ্যেই পুরো শরীর থেকে সব মাংস আলাদা করে জিহাদ মাংসের কিমা করে তারপর তা কিছু পলিথিনে রেখে দেয়। হাড়গুলোকেও ছোট ছোট টুকরো করে প্যাকেট করা হয়। পরে সেই প্যাকেটগুলো ফ্ল্যাট থেকে বের করে বিভিন্ন ধরনের পরিবহন ব্যবহার করে কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় ফেলে দেয়া হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ জনায়, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার পোলেরহাট থানার কৃষ্ণমাটি এলাকার একটি খালে মরদেহের কিছু অংশ ফেলা হয়েছে।
এরপর জিহাদকে নিয়ে রাতেই ওই খালে অভিযান শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে তারা। সরিয়ে দেয়া হয় আশপাশের লোকজনকে।
বৃহস্পতিবার রাতে জিহাদকে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। তবে অন্ধকার থাকায় তা বেশিক্ষণ চালানো সম্ভব হয়নি। তাই শুক্রবার তাকে এনে আবারো তল্লাশি চালাতে চায় পুলিশ।
আনার হত্যার পেছনে রাজনীতি না ব্যবসা, সন্ধানে গোয়েন্দারাআনার হত্যার পেছনে রাজনীতি না ব্যবসা, সন্ধানে গোয়েন্দারা
যদিও শুক্রবার পর্যন্ত মরদেহের কোনো অংশ উদ্ধার করা যায়নি। তবে তা খুঁজতে এবার মাঠে নেমেছে স্থানীয় ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ।
গত ১২ মে ঝিনাইদহর কালীগঞ্জ থেকে কলকাতায় যাওয়ার পরেরদিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার।
বুধবার সকালের দিকে তার খুনের খবর প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ বলছে, কলকাতার উপকণ্ঠে নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীভা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে আনারকে খুন করা হয়।
খুনের আলামত মুছে ফেলতে দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর সুটকেস ও পলিথিনে ভরে ফেলে দেওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়।
হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। এরা হলেন- হত্যাকাণ্ডের মূল সংঘটক ও চরমপন্থি সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভুঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি।
পুলিশ বলছে, পুরো হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড হলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহিন। এমপিকে হত্যার পর মরদেহের মাংস কিমা ও হাড় টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। কয়েকজন হত্যাকারীকে নিয়ে এ কাজে নেতৃত্ব দেন শিমুল। তিনি পরিচয় গোপন করে আমানউল্লাহ আমান নামে পাসপোর্ট করে কলকাতা যান।
জিহাদকে দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় মরদেহ ফেলার পর বান্ধবী শিলাস্তিকে নিয়ে ঢাকায় ফেরেন শিমুল ভূঁইয়া। আখতারুজ্জামান শাহিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। শাহিন দেশ ত্যাগ করে পালিয়ে যায়।