পাকা চুল মানুষের জন্য রহমত। প্রিয়নবী (স.) পাকা চুল উঠাতে নিষেধ করেছেন। মানুষের চুল পাকায় রয়েছে অনেক ফজিলত ও মর্যাদা। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা পাকা চুল তুলে ফেলো না। কেননা পাকা চুল হলো মুসলমানের জ্যোতি। কোনো মুসলমানের একটি চুল পেকে গেলে আল্লাহ তার জন্য একটি নেকি লিখে দেন, একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন, একটি গুনাহ ক্ষমা করেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ৬৯৬২)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মুসলিম অবস্থায় যার কোনো চুল বা দাড়ি পাকবে, কেয়ামতের দিন তা ওই ব্যক্তির জন্য বিশেষ আলোকবর্তিকা হবে।’ (তিরমিজি: ১৬৩৪)
তাই চুলকে কলপ দিয়ে কালো করতে নিষেধ করা হয়েছে। হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আবু কুহাফা রা. (আবু বকর রা.-এর পিতা) রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নিকট আসলেন। তখন তার মাথার চুল ও দাঁড়ি ছিল ‘ছাগামা’ নামক উদ্ভিদের ফুলের মতো তীব্র সাদা। রাসুলুল্লাহ (স.) তা দেখে বললেন, তোমার এই চুল ও দাঁড়ির শুভ্রতা কোনো কিছু দ্বারা পরিবর্তন করো। তবে তোমরা কালো কলপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাক। (সহিহ মুসলিম: ৫৪৬৬)
অন্য হাদিসে আছে, রাসুলে কারিম (স.) ইরশাদ করেছেন, আখেরি জামানায় কিছু লোক কবুতরের বুকের মতো কালো রংয়ের কলপ ব্যবহার করবে। তারা জান্নাতের খোশবুও পাবে না। (সুনানে আবু দাউদ: ৪২০৯)
তবে মেহেদি রং করা যাবে। পাকা চুল-দাড়িকে মেহেদি রং করতে উৎসাহিত করা হয়েছে হাদিসে। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (স.) চামড়ার জুতো পরিধান করতেন এবং লাল গোলাপের রস ও জাফরান দিয়ে দাঁড়িটুকু হলুদ করে নিতেন।’ (আবু দাউদ: ৪২১০) হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় সর্বশ্রেষ্ঠ বস্তু যা দিয়ে বার্ধক্যের সাদা বর্ণকে পরিবর্তন করা যায়, তা হচ্ছে মেহেদি ও কাতাম; যার ফল মরিচের ন্যায়।’ (আবু দাউদ: ৪২০৫; নাসায়ি: ৫০৮০)
আবু উমামা বাহেলি (রা.) বলেন, একদা রাসুল (স.) আনসারি বৃদ্ধ সাহাবিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদের দাড়ি সাদা হয়ে গিয়েছিল। তাদের দেখে তিনি বললেন, ‘হে আনসারের দল! তোমরা দাড়িকে লাল ও হলুদ রঙে রঞ্জিত করো এবং আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করো।’ (তাবারানি কাবির: ৩১৬; সহিহাহ: ২১১৬; সহিহুল জামে: ৪৮৮৭)
মূলত কালো কলপ ব্যবহারে নিষেধের কারণ হলো- এর দ্বারা আল্লাহপ্রদত্ত বার্ধক্যকে গোপন করে নিজেকে তরুণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এটা এক ধরণের প্রতারণা ও আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি অসন্তুষ্টি। ফলে ব্যক্তিগত আচরণেও এই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
কিন্তু মেহেদি রং বা হলুদ রং ব্যবহারে বার্ধক্যকে গোপন করা হয় না, শুধু আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করা হয়। আর এতেই রয়েছে বিপুল সওয়াব ও মর্যাদা।
অতএব, বার্ধক্যজনিত কারণে চুল-দাড়ি পেকে গেলে তাতে অসম্মানের কিছু নেই, বরং সম্মান বাড়ে, গুনাহ ঝরে যায়। তাই চুল-দাড়িকে কালো করে নিজেকে কম বয়সী জাহির করার মধ্যে সার্থকতা নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই মুমিনের বড় সার্থকতা। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।