কোরবানি ইসলামের অন্যতম একটি শিআর বা নিদর্শন। কোরবানির রক্ত প্রবাহিত করার উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না উহার (জন্তুর) গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।’ (সুরা হজ: ৩৭)
কোরবানির পশু নির্বাচনে সতর্কতা ও সচেতনতা কাম্য। প্রথমত পশু হতে হবে ‘বাহিমাতুল আনআম’ তথা ‘অহিংস্র গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু’। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম নির্ধারণ করে দিয়েছি। জীবনোপকরণ স্বরূপ তাদের যেসব ‘বাহিমাতুল আনআম’ দিয়েছি সেগুলোর ওপর তারা যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ (সুরা হজ: ৩৪)
এরকম পশু ছয় প্রকার। গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল, দুম্বা ও উট। অন্যান্য পশু দিয়ে কোরবানি নাজায়েজ। কোরবানির জন্য ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স কমপক্ষে এক বছর পূর্ণ হতে হবে। অবশ্য ছয় মাসের ভেড়া যদি দেখতে মোটাতাজা হয় এবং এক বছর বয়সের মতো মনে হয়— তাহলে তা দিয়েই কোরবানি করা বৈধ। গরু-মহিষের হতে হবে পূর্ণ দুই বছর। আর উটের পাঁচ বছর পূর্ণ হতে হবে। (হিদায়া, খণ্ড: ০৪, পৃষ্ঠা-১০৩)
উল্লিখিত পশুগুলো নর, মাদি বা বন্ধ্যা যা-ই হোক তা দ্বারা কোরবানি শুদ্ধ হবে। এরপর কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট, অধিক গোশতসম্পন্ন, নিখুঁত ও দেখতে সুন্দর হওয়া উত্তম। এছাড়া কোরবানির পশু হতে হবে যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত। হাদিসে এসেছে, ‘চার ধরনের পশু দিয়ে কোরবানি হবে না। অন্ধ, যার অন্ধত্ব স্পষ্ট; রোগাক্রান্ত, যার রোগ স্পষ্ট; পঙ্গু, যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট ও আহত, যার কোনো অঙ্গ ভেঙে গেছে।’ ( ইবনে মাজাহ: ৩১৪৪)
আলী (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের আদেশ করেছেন, আমরা যেন কোরবানির পশুর চোখ ও কান উত্তমরূপে দেখে নিই। আর আমরা যেন কানের অগ্রভাগ কাটা, কানের পেছন দিক কাটা, লেজ কাটা এবং কানের গোড়া থেকে কাটা পশু কোরবানি না করি। (নাসায়ি: ৪৩৭৩)
পবিত্র কোরআনে যেমনটি ইরশাদ হয়েছে, ‘মুসা বলল, আল্লাহ বলছেন, তা এমন গরু যা বৃদ্ধও নয়, অল্পবয়স্কও নয়—মধ্যবয়সী। সুতরাং তোমরা যা আদিষ্ট হয়েছ তা বাস্তবায়ন করো। আল্লাহ বলছেন তা হলুদ বর্ণের গরু, তার রং উজ্জ্বল গাঢ়—যা দর্শকদের আনন্দ দেয়। মুসা বলল, তিনি বলছেন, তা এমন এক গরু যা জমি চাষে ও ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি—সুস্থ নিখুঁত। ’ (সুরা বাকারা: ৬৮-৭১)
উল্লেখিত আয়াতের আলোকে ইসলামি আইনজ্ঞরা বলেন, কোরবানির পশু নিখুঁত, দৃষ্টিনন্দন, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও মধ্যবয়সী হওয়া উত্তম। তাই শরিয়তের পরামর্শ হলো- কোরবানির জন্য সব ধরণের ত্রুটিমুক্ত পশু নির্বাচনের চেষ্টা করবেন। যদিও ছোট খুঁত থাকলে যেমন- শিং আছে, তবে ভাঙা; কান আছে, তবে ছোট; একটি পা ভাঙা, তবে তিন পা দিয়ে সে চলতে পারে; গায়ে চর্মরোগ; কিছু দাঁত নেই, তবে বেশির ভাগ আছে; লেজ বা কানের সামান্য অংশ কাটা—ইত্যাদি পশু কোরবানি করা জায়েজ। তবে উত্তম হলো- কোনোরকম খুঁত ছাড়া পশু কোরবানি করা।
ভেড়া, দুম্বা, ছাগল এসব পশু একাকী কোরবানি করার পশু। আর উট, গরু, মহিষ এগুলোর একেকটিতে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হয়ে কোরবানি করা যায়। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য শরিয়ত নির্দেশিত পদ্ধতিতে আমাদের কোরবানি সম্পন্ন হোক। আমিন।