কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গত ১৩ মে সংঘর্ষ হয় মিসর ও আরবের কয়েকটি দেশের শিক্ষার্থীদের। এতে আহত হন কিরগিজস্তানের এক শিক্ষার্থী।
এর জেরে গত ১৬ মে রাত থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা শুরু করে স্থানীয়রা।
এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সেদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি, ভারতীয় এবং পাকিস্তানি শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে তারা সাহায্য কামনা করলে উজবেকিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশ দুতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কাজ শুরু করেছে।
কিরগিজস্তানে পড়তে যাওয়া একাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, গত ১৩ মে বিশকেক শহরে স্থানীয় দুই-তিন বাসিন্দাদের সঙ্গে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত মিশরীয় কয়েকজন নাগরিকদের সংঘর্ষ হয়। পরে গত ১৬ মে রাত থেকে বিশকেক শহরে থাকা সব বিদেশিদের ওপর হামলা শুরু করে স্থানীয়রা।
সেখানে থাকা পাকিস্তানি, বাংলাদেশি এবং ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ওপর একাধারে আক্রমণ চালাচ্ছে। পুরো শহরজুড়ে যেসব বসতবাড়িতে বিদেশিরা থাকে, সেখানে তাদের খুঁজে বের করে বাসায় ভাঙচুর চালানোসহ নারী পুরুষ নির্বিচারে মারধর করা হচ্ছে। এমনকি মেডিকেল কলেজগুলোর হোস্টেলে তারা ঢুকে পড়েছে। শহরজুড়ে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা ব্যর্থ।
রয়েল মেট্রোপলিটন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সৈয়দ রাকিবুল ইসলাম জানান, দেশটিতে প্রচুর বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রুমের বাইরে বের হতে নিষেধ করেছে। হঠাৎ করেই সহিংসতা শুরু হয়েছে। ফলে সবাই যে নিজ নিজ রুমে ফেরত আসতে পেরেছে বিষয়টি এমন নয়। যে যেখানে পেরেছে, আত্মগোপন করেছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে আমি দেশে ফেরত যেতে চাই, আমাকে উদ্ধার করেন।
প্রসঙ্গত, কিরগিজস্তানে বাংলাদেশের কোন আবাসিক দূতাবাস নেই। উজবেকিস্তানের বাংলাদেশ দূতাবাস কিরগিজস্তানে অনাবাসিক দূতাবাসের দায়িত্ব পালন করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিশকেকে ১৭ মে রাতে ঘটে যাওয়া ভিড়ের ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমরা উজবেকিস্তানে আমাদের দূতাবাসের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। দূতাবাস কিরগিস্তানের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও কিরগিজ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগ রাখছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো গুরুতর আহত বা প্রাণহানির খবর নেই। দূতাবাস এরই মধ্যে তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি জরুরি যোগাযোগ নম্বর শেয়ার করেছে, যাতে এই বিষয়ে যেকোনো সমস্যার জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দূতাবাসের মাধ্যমে সরকার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিরগিজ প্রজাতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করছে, যার মধ্যে পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রয়েছে। আমরা গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা তাসখন্দে নিযুক্ত আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সুস্থতা সম্পর্কে জানতে শিগগির বিশকেক সফর করতে বলেছি।
কিরগিজস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, দেশটিতে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দূতাবাস সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। এছাড়া দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। কিরগিজস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়া কোনো বাংলাদেশির আহত বা নিহত হওয়ার কোনো তথ্য এখনও নেই। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বাসা থেকে না বের হতে। তবে একটি আতঙ্ক রয়েছে- আবারও সহিংসতা হয় কি না। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমি কিরগিজে দ্রুত যাওয়ার চেষ্ঠা করছি এবং সেখানকার পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবো। শিক্ষার্থীদের চার্টার ফ্লাইটে বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। আমরা এটি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
উল্লেখ্য, কিরগিজস্তানে সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। সরকারি মেডিক্যালের শিক্ষার্থীরা নিরাপদে থাকলেও সমস্যায় আছেন বেসরকারি মেডিক্যালের ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী। তারা এ করকম গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
কিরগিজে অবস্থানকারী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ঘরের ভেতরে এবং সতর্ক অবস্থানে থাকার আহবান জানিয়েছে উজবেকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাস।