হজ ইসলামের অন্যতম রুকন। হজের অসংখ্য ফজিলত রয়েছে। সবার যেহেতু হজ করার সামর্থ্য থাকে না, দয়াময় আল্লাহ এমন কিছু আমলের ব্যবস্থা রেখেছেন, যেগুলো যথাযথ আদায়ের মাধ্যমে হজের সওয়াব পাওয়া যায়। আসুন জেনে নিই আমলগুলো কী
দ্বীন শিখতে বা শেখাতে মসজিদে যাওয়া
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে গেল কোনো ভালো কথা শিক্ষা করা বা শেখানোর উদ্দেশ্যে, সে পরিপূর্ণরূপে হজ আদায়কারী ব্যক্তির মতো সওয়াব লাভ করবে।’ (তাবারানি: ৭৪৭৩) আল্লামা নুরুদ্দিন হায়সামি (রহ.) বলেন, এর সনদ সহিহ। (মাজমাউজ জাওয়াইদ, ১/১২৩, হাদিস: ৪৯৯)
ফজরের পর মসজিদে সূর্যোদয় পর্যন্ত জিকির অতঃপর দুরাকাত নামাজ আদায়
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করল, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করল, এরপর দু রাকাত নামাজ আদায় করল, সে ব্যক্তি হজ ও ওমরার সওয়াব নিয়ে ফিরল।’ (সুনানে তিরমিজি: ৫৮৬) হাদিসটি হাসান।
মা-বাবার সেবা এবং তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নিকট এসে বলল, আমি জিহাদে অংশগ্রহণ করতে চাই, কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য ও সক্ষমতা নেই। নবীজি প্রশ্ন করলেন, তোমার মাতা-পিতার কেউ কি জীবিত আছেন? লোকটি বলল, আমার মা জীবিত। প্রত্যুত্তরে নবীজি বললেন, তাহলে মায়ের সেবা করে আল্লাহর নিকট জিহাদে যেতে না পারার অপারগতা বা ওজর পেশ করো। এভাবে যদি করতে পারো এবং তোমার মা সন্তুষ্ট থাকেন, তবে তুমি হজ, ওমরা এবং জিহাদের সওয়াব পেয়ে যাবে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর এবং মায়ের সেবা করো।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ: ১৩৩৯৯) হায়সামি (রহ.) বলেন, হাদিসটি সহিহ।
মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়
আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (স.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায় করল, সে যেন হজ করে আসল। আর যে ব্যক্তি নফল নামাজ আদায় করতে মসজিদে গেল, সে যেন ওমরা করে ফিরল।’(তাবারানি: ৭৫৭৮) হাদিসটি হাসান।
ফরজ নামাজের পর তাসবিহ পাঠ
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘দরিদ্র লোকেরা রাসুল (স.)-এর নিকট এসে বলল, সম্পদশালী ব্যক্তিরা বেশি সওয়াব এবং জান্নাত নিয়ে যাচ্ছে! আমরা যেমন নামাজ পড়ি; তারাও পড়ে! আমরা যেমন রোজা রাখি; তারাও রাখে! কিন্তু তাদের রয়েছে অতিরিক্ত সম্পদ; ফলে তারা হজ করতে পারে, ওমরা করতে পারে, জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সদকাও দিতে পারে! নবীজি (স.) তাদেরকে বললেন—
আমি কি তোমাদের এমন একটি আমল শিখিয়ে দেব না; যা করলে তোমরা অগ্রগামীদের স্তরে পৌঁছে যাবে এবং যারা তোমাদের পেছনে তারা তোমাদের স্তরে পৌঁছতে পারবে না, তোমরা হবে শ্রেষ্ঠতম মানব, তবে অন্য কেউ এটি করলে সেও তোমাদের মতো হয়ে যাবে। আমলটি হলো, প্রত্যেক নামাজের পর ৩৩বার করে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবর পাঠ করবে।’ (সহিহ বুখারি: ৮০৭, সহিহ মুসলিম: ১৬৭৪)
অথবা, প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ৩৩বার আল্লাহু আকবর, ৩৩বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৩বার সুবহানাল্লাহ পড়বে এবং একবার لَا إِلهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’ বলে ১০০ পূর্ণ করবে। (সহিহ মুসলিম: ৫৯৭; আবু দাউদ: ১৫০৪; মুসনাদে আহমদ: ৭২৪৩; সহিহ ইবনে হিব্বান: ২০১৫)
আল্লাহ তাআলা আর্থিকভাবে অক্ষম হজপ্রত্যাশীদের হজের সক্ষমতা দান করুন এবং যাদের হজ করার সামর্থ্য নেই তাদেরকে উপরোক্ত আমল যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।