গরমে গর্ভবতী নারীদের শারীরিক জটিলতা, খাবার, ঘুমসহ নানা বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। বাংলাদেশ প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ সোসাইটি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. সুমাইয়া আক্তারের পরামর্শে লিখেছেন সাদিয়া এশা। গর্ভবতী মায়েদের একটু বেশি গরম অনুভূত হয়। গরমকালে তাদের এই কষ্ট আরো বেশি হয়। উচ্চ তাপমাত্রা গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এ জন্য গরমের সময় অন্তঃসত্ত্বা নারীর বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত।
শারীরিক জটিলতা
তীব্র দাবদাহে অন্তঃসত্ত্বা মায়ের বিভিন্ন শারীরিক অসুবিধা দেখা দিতে পারে। যেমন—
১. তীব্র গরমে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এতে ক্লান্তিবোধ ও শারীরিক দুর্বলতা বেশি বেড়ে যায়।
২. মাথা ঘোরানো, অচেতন হয়ে যাওয়া ইত্যাদি হিটস্ট্রোকের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। হিটস্ট্রোকের কারণে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।
৩. মাথা ব্যথা, বমি হওয়া, রক্তচাপের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪. এ অবস্থায় যারা অতিরিক্ত কাজ করেন, ব্যায়াম করেন, রোদে হেঁটে আসা-যাওয়া করেন তাদের অতিরিক্ত ঘাম হওয়া ও পেট শক্ত হয়ে আসার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।
৫. প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া ও প্রস্রাবের রং গাঢ় হওয়া।
৬. পানিশূন্যতার কারণে হাত-মুখ শুকিয়ে যাওয়া ও হাত-পায়ে পানি আসা।
৭. ঘামাচি, অ্যালার্জি ও চুলকানি হতে পারে।
জটিলতা এড়াতে
১. অন্তঃসত্ত্বা মায়ের পানিশূন্যতা এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। দৈনিক দুই-তিন লিটার বা আট থেকে পনেরো গ্লাস পানি পান করতে হবে।
২. শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে ও অতিরিক্ত ঘাম দূর করতে নিয়মিত গোসল করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে গোসলের পানি যাতে স্বাভাবিক তাপমাত্রার নিচে থাকে।
৩. গরমে অতিরিক্ত কাজ ও বারবার বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা, ক্যাপ বা ওড়না ব্যবহার করা যায়।
পুষ্টিকর খাবার
শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করতে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন—ডাবের পানি, বাসায় বানানো লেবুর শরবত, ফলের শরবত, লাচ্ছি, দই ইত্যাদি। এ ছাড়া মিষ্টি ফল যেমন—কলা, আপেলসহ মৌসুমি ফল পেয়ারা, মিষ্টি আম, লিচু, সফেদা ইত্যাদি খেতে পারেন।
খাবার তালিকায় প্রোটিন, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। শাক-সবজি, মাছ, মাংস, ডাল, ডিম, সামুদ্রিক মাছ, বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও ছোলা বুট খেতে পারেন। তবে ক্যাফেইন-জাতীয় পানীয়, অতিরিক্ত চর্বি ও চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
একবারে বেশি না খাওয়া
অল্প অল্প করে বারবার খেতে হবে। এতে অভ্যন্তরীণ বিপাক ক্রিয়া সহজ হয়। শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে না। ফলে শরীরে তাপ উৎপাদন কম হয়। শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে।
আরামদায়ক পোশাক
গর্ভবতী মায়েদের গরম অনুভূত হয় বেশি। এ সময় শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে, যাতে গায়ে বাতাস লাগে। হালকা রঙের সুতি কাপড়ের ও আরামদায়ক পোশাক বেছে নিতে পারেন। অতিরিক্ত ঘামে পোশাক ভিজে গেলে তা দ্রুত পরিবর্তন করে ফেলতে হবে। অন্যথায় ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম
পর্যাপ্ত ঘুম শারীরিক দুর্বলতা কাটানোসহ মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে শরীরকে কর্মক্ষম করে। দুপুরে খাওয়ার পর অন্তত ৩০ মিনিট ঘুমানো উচিত। ঘুমানোর সময় পা একটু উঁচু রাখতে পায়ের নিচে বালিশ রেখে ঘুমান। এতে পায়ে রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে। এ ছাড়া দীর্ঘক্ষণ কোথাও বসলে পা একটু উঁচু করে রাখুন। গর্ভাবস্থায় হাঁটাচলা, ব্যায়াম, সাঁতার কাটা ইত্যাদি বিষয়ে চিকিৎসকের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী চলুন।