সপ্তাহ ব্যবধানে নড়াইলে সদ্য উঠা সব ধরনের বোরো ধানের দর মনপ্রতি অন্তত ১০০ টাকা কমেছে। আশার ফসল ঘরে উঠতে না উঠতেই নিম্নগামী বাজার দরে হতাশ চাষিরা অভিযোগ করছেন, চড়া দামে সার-সেচ-শ্রম দিয়ে ফসল ফলাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও সে অনুপাতে ধানের দাম না পাওয়া তারা ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন, কৃষক বাঁচাতে ধানের উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ দর নিশ্চিতের দাবি তাদের।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় বোরো আবাদকৃত মোট ৫০ হাজার ২৩০ হেক্টর জমি থেকে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৪৯৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট আবাদী জমির মধ্যে ৯৭ ভাগ ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে নতুন ধানে সয়লাব হাটবাজার।
শুক্রবার সরেজমিন নড়াইলের তুলারামপুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, চাষিরা তাদের সারা মৌসুমের দায়-দেনাসহ অপরিহার্য নানা প্রয়োজনে উৎপাদিত ধান বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে আসছে। এতে বেলা বাড়তে না বাড়তেই ক্রেতা-বিক্রেতার ব্যাপক সমাগমে হাট কানায় ভরে ওঠে।
হাটে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক ও ধান ব্যাপারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার সর্ববৃহৎ এ পাইকারি ধানের মোকামে বোরোর মোটা জাতের মধ্যে হাইব্রিড হিরাধান, ব্রিধান ৭৪, মাঝারি জাতের মধ্যে সূবর্ণলতা, ছক্কা, এসএল ৮এইচ এবং সরু জাতের ব্রিধান ৫০, ৮৯, তেজগোল্ড ধান প্রচুর পরিমাণে আমদানি হয়েছে। মোটা ধান প্রতি মন ১ হাজার ৫০ এবং চিকনধান ১ এক হাজার ১৮০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব ধান গেলো সপ্তাহে প্রতি মন ১০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়েছে।
চাষিদের অভিযোগ, বোরো আবাদ মৌসুমের প্রথম থেকেই শ্রম, ডিজেল সার, কীটনাশকসহ সব কিছুর যোগান দিতে বেসামাল কৃষককে ধার-দেনার পাশপাশি গ্রাম্য মহাজন, বিভিন্ন সমিতিসহ নানা মাধ্যম থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও যথাযথ পরিচর্যায় বোরোর ভালো ফলনে ধার-দেনা শোধ করে লাভের মুখ দেখবে ভেবে কৃষক আশায় বুক বাঁধলেও নতুন ধান ঘরে উঠতে না উঠতেই ধানের কাঙ্খিত দাম না পাওয়া চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছে।
বছর বছর ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ক্রমাগত লোকসান দিয়ে চাষিদের আর্থিক অবস্থার ক্রমে অবনতি হচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করে তুলারামপুর বাজার বনিক সমিতির সভাপতি বিশিষ্ট কৃষিপণ্য কারবারি মো. জিল্লুর রহমান বিশ্বাস নিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের উৎপাদন খরচের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ মূল্য নিশ্চিত করে তাদের ভাগ্য উন্নয়ন ব্যতীত কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন অসম্ভব।
অন্য দিকে, চাষাবাদ সম্প্রসারণে ফসলের উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাজার দর নিশ্চিত জরুরি বলে মনে করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। তিনি কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে এ বিষয়ে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তৎপর রয়েছে বলেও জানান।