গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির সবশেষ কায়রো সংলাপ ভেস্তে যাওয়ার পর ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজার বেসামরিক নাগরিকদের পূর্ব রাফাহ থেকে উত্তর দিকে সরিয়ে নেয়া শুরু করেছে। আজ সোমবার ইসরাইলভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্যা জেরুসালেম পোস্ট এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, জিম্মি চুক্তির আলোচনা ভেস্তে যাবার পর সোমবার আইডিএফ রাফাহ শহরের পূর্বাঞ্চল থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়া শুরু করে। এদিন সকালে আইডিএফ জানায়, তারা একটি নিরাপদ মানবিক অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে।
এই মানবিক অঞ্চলটি আল-মাওয়াসি, খান ইউনিস ও মধ্য গাজার কিছু অংশ অংশ গঠিত হয়েছে। আইডিএফ বলছে, নতুন সম্প্রসারিত মানবিক অঞ্চলের মধ্যে ফিল্ড হাসপাতাল, তাঁবু, খাদ্য, পানি, ওষুধ ও অন্যান্য সরবরাহের বর্ধিত ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে যাওয়ার জন্য রুটও নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে।
আইডিএফ বলেছে, ওই অঞ্চলের অন্তত এক লাখ বাসিন্দাকে ঘরবাড়ি ছাড়তে হবে। তা না হলে নিজেদের বিপদে ফেলবে। আগের রাতেই রাফাহতে বিমান হামলায় ১২ জন নিহত হয়েছে।
আইডিএফ বলছে, রাফাহ শহরে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় অভিযান চালানো হবে। সীমিত আকারে এই অভিযান শুরু আগে অন্তত এক লাখ মানুষকে ওই এলাকা ছাড়তে হবে। রাফাহ শহরের বাসিন্দাদের খান ইউনিস ও আল-মাওয়াসি এলাকায় কথিত মানবিক এলাকায় সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
আকাশ থেকে ফেলা সব লিফলেটে লাল ও নীল রঙের লেখায় বলা হয়েছে, আইডিএফের চালানো নির্দিষ্ট অভিযান এলাকায় কেউ অবস্থান করলে তারা নিজেদের এবং পরিবারের সদস্যদের বিপদে ফেলবে। নীল লেখায় বলা হয়েছে, সেখানে নিরাপদ জোন সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং মানবিক সহায়তা দেয়া হবে।
একই সঙ্গে সতর্ক করা হয়েছে, কেউ যেন গাজার উত্তরে বা পূর্ব ও দক্ষিণের ওয়াদি গাজায় না যায়। কারেম সালোম সীমান্ত ক্রসিং আপাতত বন্ধ থাকবে। তবে নেটজারিম করিডোরের কাছে ইরেজসহ অন্যান্য ক্রসিং খোলা থাকবে, যাতে করে ত্রাণবাহী যানবাহন নির্বিঘ্নে মানবিক অঞ্চলে যেতে পারে।
আইডিএফ জানিয়েছে, বেসামরিক লোকেরা সরে যাওয়ার পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। লিফলেট, টেক্সট মেসেজ, ফোন কল এবং আরবি ভাষায় বিবৃতির মাধ্যমে তাদেরকে সরে যাওয়ার আহবান জানানো হচ্ছে।
আইডিএফ বলেছে, হামাসকে ধ্বংস করা এবং সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনাসহ যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। ফিলিস্তিনি মিডিয়া জানিয়েছে, লিফলেটগুলোতে গাজা শহরকে ‘বিপজ্জনক যুদ্ধ অঞ্চল’ হিসাবে বিবেচিত করতে সতর্ক করা হয়েছে।
ইসরায়েলি এমন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থা ইউএনডব্লিউআরএ বলেছে, রাফাহতে ইসরায়েলি আক্রমণের অর্থ আরও বেসামরিক দুর্ভোগ এবং মৃত্যু। এই হামলা ১৪ লাখ মানুষের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে।
গাজা উপত্যকার দক্ষিণের শহর রাফাহতে অন্তত ১৪ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বেশিরভাগই গাজার অন্যান্য স্থান থেকে ইসরাইলি হামলায় ঘরবাড়ি হারানো উদ্বাস্তু। বেশিরভাগ মানুষই এই রাফাহ শহরে থাকছে তাঁবু টানিয়ে। এবার সেই রাফাতেই পুরোমাত্রায় অভিযান চালাবে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)।
পশ্চিমা বিশ্ব আগেই ইসরাইলকে সতর্ক করে বলেছে, রাফাহতে সামরিক অভিযান হলে পরিস্থিতি বিপর্যয়কর হয়ে পড়বে। এমনকি মার্কিন প্রশাসন ইসরাইলি পরিকল্পনা জানার পরও তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেনি। তারা বলেছে, রাফাহ অভিযানের ফলে অনেক বেসামরিক ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ঝুঁকিতে ফেলে দিবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, রাফাতে বড় ধরনের সামরিক অভিযানকে সমর্থন করতে পারি না।