দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় বসেছে ২০০ বছরেরও বেশি সময়ের ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা আজ শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) উদ্বোধন করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় মেলা চত্বরে মেলা কমিটির সভাপতি শিক্ষক সৈয়দ আবুল হাসান আজাদের সভাপতিত্বে আয়োজিত মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুশফিকুর রহমান বাবুল।
এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান মিজান, সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আলম ডাবলু ও প্রধান শিক্ষক শ্যামল চন্দ্র উপস্থিত ছিলেন।
মেলাকে কেন্দ্রে করে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ঘোড়া নিয়ে এসেছেন ঘোড়া ব্যবসায়ীরা। ঘোড়ার এ মেলায় বসেছে গ্রামীণ মেলাসহ বিভিন্ন খাবারের দোকান। ঐতিহ্যবাহী এ ঘোড়া মেলা এবছর সুষ্ঠভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় আনন্দিত ক্রেতা-বিক্রেতা, দর্শনার্থীসহ মেলার আয়োজকরা।
এদিকে মেলা উপলক্ষে মেলায় আগত ঘোড়া ব্যবসায়ীদের ঘোড়ার অংশ গ্রহণে ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ঘোড়দৌঁড় দেখতে বিভিন্নস্থান থেকে ছুঁটে আসেন নানা বয়সী দর্শনার্থী।
জানা যায়, প্রতি বছর বৈশাখ মাসের ৯ অথবা ১০ তারিখ থেকে ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের মেলাবাড়ী মাঠে এই ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা বসে। ১৩ বৈশাখ ঘোড়াসহ গবাদিপশু বেচাকেনার জন্য মেলার ছাপা (রশিদ) বের হয়। মেলাটি অন্তত ১৫ দিন স্থায়ী হয়। তবে স্থানীয়ভাবে গরু, মহিষ ও ছাগল তেমন বেচাকেনা না হলেও ঘোড়াই মূলত বেচাকেনা হয়ে থাকে। এ কারণে এটি বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা নামেই দেশব্যাপী পরিচিত।
প্রবীণ শিক্ষক দছিম উদ্দিন মন্ডল বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলাটি দেশব্যাপী ব্যাপক পরিচিত। ঘোড়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই এই মেলা শুরু এবং শেষ হওয়ার তারিখ জানেন। এ কারণে প্রতিবছর মেলা শুরুর আগ থেকেই ঘোড়া বেচাকেনা করতে আসেন সংশ্লিষ্টরা। মেলাকে কেন্দ্র করে হরেক রকম দোকানপাট বসেন মেলায়। বিনোদনের জন্য সার্কাস, দোলনাসহ নাগর দোলা আসে মেলায়। বছর বৈশাখ মাসে মেলাটি শুরু এবং শেষ হয়।
নবাবগঞ্জের দলারদরগা এলাকা থেকে ঘোড়া নিয়ে এ মেলায় এসেছেন ঘোড়া ব্যবসায়ী মোকলেছুর রহমান। ৩ টি ঘোড়া নিয়ে বুড়া চিন্তামন ঘোড়া মেলাতে অংশ নিয়েছেন। সারাবছর দেশের বিভিন্নস্থানে অনুষ্ঠিত ঘোড়ার মেলাতে ঘোড়া নিয়ে অংশ নেন। ঘোড়া বিক্রি করেই জীবনজীবিকা নির্বাহ করেন।
বিরামপুর উপজেলার ভগবতিপুর থেকে আসা ঘোড়া ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, ২০ বছর ধরে এই ঘোড়ার মেলায় ঘোড়া বেচাকেনা করে আসছি। এবারও ৪টি ঘোড়া বিক্রি করতে মেলায় এসেছি। ঘোড়ার মধ্যে একটি রয়েছে সাদা রংগের ঘোড়া। সেটির নাম রাখা হয়েছে বিজলী। খুবই দুর্দান্ত ঘোড়া এটি। ঘোড়াটির দাম রাখা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু ক্রেতারা ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা দরদাম করছেন। ৫০ টাকার টাকার ওপরে হলেই ঘোড়াটি বিক্রি করে দেবো।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুস সাকিব বাবলু বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি মেলা কমিটিও সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। অতি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মেলা উত্তরবঙ্গের কোথাও নেই।
মেলা কমিটির সভাপতি সৈয়দ আবুল হাসান আজাদ বলেন, স্বাধীনতার পরও নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে মেলায় ঘোড়া এসেছে। এখন বিদেশ থেকে ঘোড়া না আসলেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেলায় ঘোড়া আনেন মালিকরা।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, মেলার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা কাজ করছেন।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মাদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলার মালিক হচ্ছেন জেলা প্রশাসক। গতকাল শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) থেকে মেলায় ঘোড়া বেচাবিক্রির জন্য ছাপা (রশিদ) বের করা হয়েছে।