দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় ৬৪ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৬৫টি। সহকারী শিক্ষকেরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এতে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান ও প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকেরা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানা যায়, বিদ্যালয়গুলোতে দুই থেকে পাঁচ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদগুলো শূন্য রয়েছে। প্রতি মাসেই শিক্ষা অফিস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে থাকছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচ-ছয়জন শিক্ষরে পদ রয়েছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০০ জনের বেশি হলে শিক্ষকের পদ বাড়বে। এরমধ্যে প্রধান শিক্ষক না থাকলে সেখানে সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে থাকেন।
পুখুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষকের পদ আছে পাঁচটি। কর্মরত আছেন দুইজন। এই দুইজনের মধ্যে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটি রয়েছেন। এজন্য অন্য বিদ্যালয় থেকে দুইজন শিক্ষক প্রেওণ করা হয়েছে। সহকারী শিক্ষক কাজল রেখা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন। তাকে প্রশাসনিক কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। অন্য শিক্ষকদের কোনোমতে পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হয়।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজল রেখা বলেন, প্রধান শিক্ষকের পদটি প্রায় দুই বছর ধরে শূন্য রয়েছে। ফলে অনেক কষ্টে পাঠদান চালানোর পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।
একইভাবে নিরট্রি রশিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ রয়েছে ৬ জনের। কর্মরত আছেন দুইজন। এরমধ্যে একজন অসুস্থ রয়েছেন। বিদ্যালয়ের পাঠদান স্বাভাবিক রাখতে অন্য বিদ্যালয় থেকে প্রেষণে রয়েছেন একজন শিক্ষক। এ বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে ৮৩ জন। সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ভারপ্রপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন। তাকেও নিজ পাঠদানের পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় বেশির ভাগ সময়।
বলিভদ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে প্রধান শিক্ষক নেই। ছেফাতুন আলমিরা নামের একজন সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকের পদ ৬ জন। কর্মরত আছেন তিনিসহ ৫ জন। এখানে শিক্ষার্থী রয়েছে ৭৪ জন।
বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছেফাতুন আলমিরা বলেন, ‘নিজের ক্লাস নেওয়ার সঙ্গে বিদ্যালয়ের মিটিংসহ সভা-সেমিনারে যেতে হয় উপজেলা সদরে। সব মিলিয়ে কষ্ট করে হলেও শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা হয়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এসকে মোহাম্মদ আলী দুলাল ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলিম বলেন, ২০১৮ সালের পর আর কোনো প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় পদগুলো পূরণ হচ্ছে না। একইভাবে পদন্নোতির অপেক্ষায় রয়েছেন ৪০ জন। এই ৪০ জন সহকারী শিক্ষক ৪০ বিদ্যালয়ে চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব
পালন করছেন। ফলে এসব শিক্ষকরা এখন না সহকারী শিক্ষক, না প্রধান শিক্ষক এমন অবস্থায় ঝুলে রয়েছেন।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান বলেন, উপজেলায় পৌর এলাকাসহ ৭টি ইউনিয়নে মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১০৯ টি। এরমধ্যে ৪৫ টি বিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক দায়িত্বে রয়েছেন। শূন্য পদ রয়েছে ৬৪টি। এই ৬৪ পদের বিপরীতে ২০১৮ সালে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে ৪০ জন প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরমধ্যে ইতোমধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন ৩৯ জন। যারা এখন পদোন্নতি অপেক্ষায় রয়েছেন। অপরদিকে ২০১৮ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে অবসরজনিত এবং মৃত্যুজনিত কারণে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হয়েছে আরো ২৪টি। এই ২৪টি পদের বিপরীতে বিদ্যালয়গুলোর সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। একইভাবে সহকারী শিক্ষকের পদশূন্য রয়েছে ৬৫ টি।