রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর একটি কনসার্ট হলে ভয়াবহ হামলায় ঘটনায় চার সন্দেহভাজনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। সোমবার তাদের হাত বেঁধে পিঠমোড়া করে কড়া নিরাপত্তায় তোলা হয় মস্কোর জেলা আদালতে।
তাদের মধ্যে একজনকে হুইল চেয়ারে করে আদালতে নিতে দেখা যায় মুখোশ পরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। গ্রেপ্তারদের প্রত্যেকের চোখেমুখেই বড় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এজলাসের পাশে কাঁচে ঘেরা ছোট কক্ষে চেয়ারে বসা অবস্থায় তাদের চরম অসুস্থ দেখা গেছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্যাতন চালিয়ে একজনের কান কেটে ফেলা হয়েছে বলে খবর দিয়েছে খোদ রুশ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। খবর- আলজাজিরা ও বিবিসির।
হামলায় নিহতের সংখ্যা ১৪০ ছাড়িয়েছে। আর আহত ১৮২ জনের মধ্যে ৪০ জনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এদিকে হামলার সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে ফ্রান্সেও।
আদালতে তোলা চারজনই তাজিকিস্তানের নাগরিক। তারা হলো ৩২ বছর বয়সী দালেরদজন মিরজোয়েভ, সাইদাক্রমি রাচাবালিজোদা (৩০), শামসিদিন ফরিদুনি (২৫) এবং মুহাম্মাদসোবির ফয়জভ (১৯)। আদালতের কর্মকর্তারা জানান, মিরজোয়েভ ও রাচাবালিজোদা হামলায় তাদের দোষ স্বীকার করেছেন। অপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
রাশিয়ার গণমাধ্যম বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের নির্যাতন করেছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদের বেশ কিছু নৃশংস ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
আদালতে অভিযুক্তদের মুখ ফুলে যাওয়াসহ ভারী আঘাতের চিহ্ন দৃশ্যমান ছিল। ফয়জভকে হাসপাতাল থেকে হুইলচেয়ারে আদালতে আনা হয়। আদালত চলাকালে পুরো সময় তাকে চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে নিস্তেজ অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যায়।
এসময় চিকিৎসকও উপস্থিত ছিলেন। আসামির পরনে ছিল হাসপাতালের গাউন। তার শরীরে একাধিক কাটা দাগ দেখা যায়। রাচাবলিজোদারও কানে ভারী ব্যান্ডেজ ছিল। রাশিয়ার গণমাধ্যমে শনিবার বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদের সময় একজনের কান কেটে ফেলা হয়েছে।
রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ‘মৃত্যুর পরিবর্তে মৃত্যু’ এমন শাস্তি প্রয়োজন। এই ঘটনার পর রাশিয়ায় মৃত্যুদণ্ড আবারও চালু করা উচিত কিনাু তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
ক্রেমলিনের সঙ্গে জড়িত রুশ মিডিয়া ও টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সন্দেহভাজনদের একজন বলেছেন, ‘আমি মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছি।’ কেন হামলা চালিয়েছে- জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, টাকার জন্য। হামলা করলে তাকে ৫০ লাখ রুবল বা ৫ হাজার ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে ইসলামিক স্টেট বলেছে, তাদের চার যোদ্ধা মেশিনগান, পিস্তল, ছুরি এবং ফায়ারবোমায় সজ্জিত হয়ে এই হামলা চালিয়েছে।
এক কিশোরই বাঁচিয়েছে শতাধিক মানুষকে: এদিকে শুক্রবারের হামলার সময় শতাধিক মানুষকে নিরাপদে সরে যেতে সহযোগিতা করেছিল এক কিশোর। সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তার জন্য তাকে বীর আখ্যা দিয়ে পুরস্কৃত করছেন কেউ কেউ।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থায় সেদিনের সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে ১৫ বছর বয়সী ইসলাম খালিলভ। সিটি হলের বিশ্রামাগারে পরিচারক হিসেবে কাজ করে সে। খালিলভ বলে, ‘তাঁদের কোথায় যেতে হবে, তা আমি দেখিয়ে দিচ্ছিলাম এবং সবাইকে সহযোগিতা করছিলাম।’
এদিকে, জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে ফ্রান্সে। গত রোববার দেশটির শীর্ষ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর বৈঠক হয়। এর পর প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আতাল এ তথ্য জানান।