বাস, লেগুনা ইত্যাদি যানবাহনে নারীর গা ঘেঁষে বা শরীর লাগিয়ে বসা জায়েজ নেই। এক্ষেত্রে মাঝখানে কোনো কিছু রেখে বসা যেতে পারে। রাখার মতো কিছু না থাকলে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে বসা যেতে পারে। প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে যেতে হবে; তবুও চাপাচাপি করে পাশাপাশি বসা যাবে না। এ বিষয়ে হাদিসে অনেক দলিল বিদ্যমান।
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন- فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ ‘চোখের জেনা হলো (হারাম) দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জেনা হলো (গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক) কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জেনা হলো (গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক) কথোপকথন। হাতের জেনা হলো (গায়রে মাহরামকে) ধরা বা স্পর্শকরণ।
পায়ের জেনা হলো, (খারাপ উদ্দেশ্যে) চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় (যদি জিনা করে) এবং মিথ্যা পরিণত করে (যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে)। (মুসলিম ২৬৫৭, মুসনাদে আহমদ: ৮৯৩২)
অন্য হাদিসে নবীজি (স.) বলেছেন- الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ، فَإِذَا خَرَجَتْ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ‘নারী জাতি হলো আপাদমস্তক সতর। যখনি সে বের হয়, তখনি শয়তান তাকে চমৎকৃত করে তোলে। (সুনানে তিরমিজি: ১১৭৩, মুসনাদুল বাজ্জার: ২০৬৫, সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১৬৮৫, সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৫৯৮)
হজরত ওমর (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যখনই কোনো পুরুষ পর নারীর সাথে নির্জনে দেখা করে তখনই শয়তান সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত হয়। (সুনানে তিরমিজি: ২১৬৫, সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৫৮৬)
গা ঘেঁষে বসা পুরুষের পক্ষ থেকে যেমন জায়েজ নেই; নারীদের পক্ষ থেকেও জায়েজ নেই। একে-অপরের দিকে দৃষ্টিপাত করাও নাজায়েজ। পুরুষের দিকে দৃষ্টিপাত করা নারীদের জন্য নাজায়েজ। উম্মে সালামা (রা.) বলেন, একদা আমি নবী (স.)-এর কাছে ছিলাম এবং তাঁর কাছে মায়মুনা (রা.)-ও ছিলেন। এসময় ইবনে উম্মু মাকতুম (রা.) এলেন।
ঘটনাটি পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পরের। রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, তোমরা তার থেকে আড়ালে চলে যাও। আমরা বললাম, হে আল্লাহ রাসুল! সে কি অন্ধ নয়? সে তো আমাদের দেখতে ও চিনতে পারছে না। নবী (স.) বললেন, যদিও সে অন্ধ কিন্তু তোমরা উভয়ে কি তাকে দেখছ না? (সুনানে আবি দাউদ: ৪১১২)
হজরত ওসামা ইবনু জায়েগ (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, ‘পুরুষের জন্য স্ত্রীজাতি অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর কোনো ফিতনা আমি রেখে গেলাম না। (সহিহ বুখারি: ৫০৯৬)
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, নিশ্চয় দুনিয়া লোভনীয় ও সবুজ-শ্যামল। আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে তোমাদেরকে খলিফা (শাসক) বানিয়েছেন। তিনি দেখবেন যে, তোমরা কেমন কাজ করো। সাবধান! দুনিয়া সম্পর্কে সর্তক হও এবং নারীদের সম্পর্কেও সর্তক হও। নিশ্চয় বনী ইসরাইলের মাঝে প্রথম ফিতনা নারীদের মাধ্যমেই হয়েছে। (সহিহ মুসলিম: ২৭৪২)