বাগেরহাটের মোংলায় ভারতীয় মালিকানাধীন ভিআইপি লাগেজ ফ্যাক্টরি নামে একটি কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে মোংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড)। ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় পুলিশ ও ইপিজেডের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়েছে।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে শ্রমিক, পুলিশ সদস্য ও সংবাদকর্মীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত মোংলা ইপিজেডের গেটে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় পুলিশ আট শ্রমিককে আটক করেছে।
এর আগে ভিআইপি লাগেজ ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদের সোমবার সকাল থেকেই কারখানার সামনে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরই জেরে ইপিজেড ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় কারখানা ভাঙচুরেরও ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে। বেলা সাড়ে ১১টার পর পর বেপজা নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ছোড়ে। এ ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে শ্রমিক, কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও সংবাদকর্মী রয়েছেন।
শ্রমিকরা জানান, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ভিআইপির সাতটি প্লান্টের প্রায় ১৮০০ শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। সোমবার সকালে কাজে এসে এমন খবর শুনে তারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। প্রতিষ্ঠানটির সাতটি প্লান্টের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে সেখান থেকে ইজিজেডের প্রধান ফটকে গেলে নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের আটকে দেন। এতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শ্রমিকরা। এসময় ভিআইপির একটি কারখানায়ও ভাঙচুর করা হয়।
সুবর্ণা ও তানিয়া নামে এ কারখানার দুই শ্রমিক বলেন, বেতন আমরা পাইনি। আবার কাজ থেকেও বাদ দিয়ে দিছে। এজন্য আমরা আন্দোলন করছি। কিন্তু আমাগো ওপর হামলা করছে। আমাগো ওপরই বেশি হিংস্র হয়ে হামলা করছে। ৩০ জনের বেশি শ্রমিক আহত হইছে। আরও কে কোথায় গেছে, তা কইতে পারি না।
শ্রমিক বায়েজিদ বলেন, আট মাস ধরে এ কোম্পানিতে রয়েছি। আগে কোনো নোটিশ ছাড়াই আমাদের হঠাৎ করে বের করে দিয়েছে, কি করব এখন? সামনে ঈদ।
সুবর্ণা বলেন, আমরা মূলত অন্য ফ্যাক্টরিতে কাজ করতাম। ভালো বেতন এবং সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বলে আমাদের এ ফ্যাক্টরিতে এনেছে। এখন ঈদের আগে আমাদের বের করে দিয়েছে। কোথায় যাব, কী করব, না খেয়ে মরতে হবে আমাদের। এছাড়া পুলিশ ও আনসারদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। সুরাইয়া আক্তার নামের একজনের অবস্থা গুরুতর। আরও কয়েকজনকে পুলিশ আটক করেছে।
মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত, শ্রমিকরা ইজিপেড ফটক ছেড়ে চলে গেছেন।
প্রতিষ্ঠানটি (ভিআইপি লাগেজ) বলছে, তারা নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের এক মাসের বেতন, ভাতা ও বোনাস দিয়েছে। তবে শ্রমিকরা বলছেন, কোনো টাকা পাননি।