২০২১ সালের অগাস্টে গোটা বিশ্ব যখন আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসে তালেবান সরকার। তালেবান শাসনে যেখানে কেউ গান গাইলেই হতে পারে গ্রেপ্তার; সেই গুরুতর বিপদ মাথায় নিয়েও দুই বোন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গানে গানে ‘লাস্ট টর্চ’ শীর্ষক আন্দোলন শুরু করেন।
গান শুরুর আগে রেকর্ড করা একটি ভিডিওতে দুই বোনের একজন বলেন, “আমরা গান শুরু করতে চলেছি। তবে এতে আমাদেরকে আমাদের জীবনের মূল্য দিতে হতে পারে।”
পরিচয় গোপন করার জন্য বোরকা পরে প্রকাশ্যে আসেন তারা।
দুই বোনের মধ্যে ছোটজন শাকায়েক (আসল নাম নয়) বলেন, “আমাদের লড়াই শুরু হয়েছে তালেবানের পতাকাতলে এবং তালেবানের বিরুদ্ধে। তালেবান ক্ষমতায় আসার আগে, আমরা কখনও একটি কবিতাও লিখিনি।”
ক্ষমতায় ফেরার পর তালেবানের দৃষ্টিভঙ্গি ষ্পষ্ট হতে ২০ দিনেরও কম সময় লেগেছিল। দৈনন্দিন জীবনে শরিয়া আইন আরোপ এবং শিক্ষায় নারীর প্রবেশাধিকার সীমিত করা তাদের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল। নারীরা কাবুলসহ বড় বড় শহরের রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ গড়ে তুললেও তা কঠোরভাবে দমন করা হয়।
শাকায়েক বলেন, “আমরা দেখতে পেলাম নারীরাই আশার শেষ আলো। তাই আমরা নিজেদেরকে ‘লাস্ট টর্চ’ নাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আমরা কোথাও যেতে পারব না ভেবে, আমরা বাড়ি থেকেই গোপনে প্রতিবাদ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
তাদের গানগুলোর মধ্যে একটি ছিল- প্রয়াত নাদিয়া আঞ্জুমানের লেখা একটি বিখ্যাত কবিতা; যেটি ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে প্রথম তালেবান শাসনামলের প্রতিবাদে লিখেছিলেন তিনি।
দুই বোনের মধ্যে বড় বোন মাশাল (এটিও ছদ্মনাম) বোরকাকে ‘ভ্রাম্যমাণ খাঁচা’র সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “এটি কবরের মতো। যেখানে হাজার হাজার নারী ও মেয়ের স্বপ্নকে সমাহিত করা হয়।
“এ বোরকা একটা পাথরের মতো, যা তালেবান ২৫ বছর আগে নারীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। এবার ক্ষমতায় ফিরেও তারা তাই-ই করেছে। আমরা এখন তাদের ব্যবহার করা অস্ত্রকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাই। তাদের কড়াকড়ির বিরুদ্ধে লড়তে চাই।”
দুই বোন এখন পর্যন্ত ৭টি গান প্রকাশ করেছেন। শুরুতে তারা অন্যান্য লেখকদের গান গাইতেন, কিন্তু এখন তারা নিজেরাই গান লিখছেন। কারণ, তারা মনে করছেন, তারা যা বলতে চান সেটি তেমন করে অন্য কোনও কবিতাই ফুটিয়ে তুলতে পারবে না।