গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে শেষ ধাপের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে পশ্চিমা সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনে (ন্যাটো) যোগ দিয়েছে সুইডেন।
রাশিয়া তার এক প্রতিবেশী দেশে আক্রমণ করায় আরেক প্রতিবেশী সুইডেন তাদের জাতীয় নিরাপত্তা নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হয়। ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়াই তাদের নিরাপত্তার সর্বোত্তম নিশ্চয়তা বলে সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি।
রটার্স জানিয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসিতে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ খ্রিস্তেসন জোটে যোগ দেওয়ার চূড়ান্ত নথিগুলো যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে হস্তান্তর করে এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ সম্পন্ন করেন। ন্যাটো জোটে নতুন কোনো দেশের যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরনো সব সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হয়, তুরস্ক ও হাঙ্গেরির আপত্তিতে সুইডেনের সদস্য হওয়া কিছুদিন ঝুলে থাকলেও পরে সে বাঁধাও পার হয় স্টকহোম।
খ্রিস্তেসনের কাছ থেকে যোগদান সংক্রান্ত নথিগুলো গ্রহণ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, “ভালো জিনিস তাদের কাছেই আসে যারা অপেক্ষা করে।”
তিনি বলেন, রাশিয়া ইউক্রেইনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করার পর ‘সবকিছু বদলে গেছে’, জনমত জরিপগুলোতে দেখা যায় সুইডেনের জনমত ব্যাপক পরিবর্তিত হয়ে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পক্ষে চলে এসেছে।
“সুইডিশরা গভীর একটা বিষয় উপলব্ধি করতে পেরেছিল: পুতিন যদি মানচিত্র থেকে এক প্রতিবেশীকে মুছে ফেলার চেষ্টা করতে ইচ্ছুক হন, তাহলে হয়তো তিনি সেখানে থামবেন না।”
কয়েক দশকের মধ্যে ন্যাটোতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংযোজন সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের জোটটিতে যোগ দেওয়া। ফিনল্যান্ডের সঙ্গে রাশিয়ার ১৩৪০ কিলোমিটার সীমান্ত আছে। এটি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্যও একটি ধাক্কা, কারণ তিনি ন্যাটোর শক্তিবৃদ্ধি ঠেকাতে চেয়েছিলেন।
সদস্য হওয়ায় এখন থেকে সুইডেন ন্যাটোর অভিন্ন প্রতিরক্ষা নিশ্চয়তার সুবিধা পাবে, যার অধীনে জোটের এক সদস্যকে আক্রমণ করাকে সবার উপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
ওয়াশিংটন থেকে সুইডিশ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে খ্রিস্তেসন বলেন, “গতকাল থেকে আজ সুইডেন আরও নিরাপদ দেশ। আমাদের মিত্র আছে। আমাদের সমর্থন আছে।”
এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, “সুইডেন ন্যাটোকে সকল সময়ের চেয়ে আরও ঐক্যবদ্ধ, দৃঢ় ও গতিশীল করেছে।”
সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের যোগ দেওয়ায় ন্যাটোতে ‘অত্যন্ত দক্ষ দু’টি সামরিক বাহিনী’ যুক্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আটলান্টিক মহাসাগর ও বাল্টিক সাগরের সংযোগপথে অবস্থিত সুইডেন কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুইডেনের অত্যাধুনিক ডুবোজাহাজ ও নিজেদের তৈরি গ্রিপেন যুদ্ধবিমানের বড় বহর আছে, এখন এগুলোর সবই ন্যাটোর সামরিক বহরের অংশ হলো।
ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টোলটেনবার্গ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “সুইডেন যোগ দেওয়ায় ন্যাটো আরও শক্তিশালী, সুইডেন নিরাপদ আর পুরো জোটের নিরাপত্তা আরও জোরদার হয়েছে।”
সুইডেন ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া ‘রাজনৈতিক ও সামরিক-প্রযুক্তিগত পাল্টা ব্যবস্থা’ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুইডেন কোনো সামরিক জোটে যোগ না দিয়ে এবং প্রতিবেশীদের যুদ্ধের সময় কোনো পক্ষে যোগ না দিয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটি মানবাধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিল। কিন্তু গত দুই দশক ধরে দেশটি ন্যাটোর সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে তুলেছিল আর এখন সামরিক জোটটিতে যোগ দিয়ে দীর্ঘ নিরপেক্ষতার ঐতিহ্য ভাঙল দেশটি।
২০২১ সালেও সুইডেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু এর পরের বছরই প্রতিবেশী ফিনল্যান্ডের পাশাপাশি তারাও জোটে যোগ দেওয়ার আবেদন করে।