ভারতের আসাম রাজ্যে প্রায় ৯০ বছরের পুরনো মুসলিম বিয়ে ও ডিভোর্স রেজিস্ট্রেশন আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শুক্রবার রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর অর্থ এবার থেকে মুসলিমদের বিয়েও স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট এর আওতায় নথিভুক্ত করতে হবে।
চলতি বিধানসভার অধিবেশনে এই সম্পর্কিত একটি বিলও পেশ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী জয়ন্ত মাল্লা বড়ুয়া বলেন, সম্প্রতি আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে আমরা অভিন্ন দেওয়ানী বিধির (ইউনিফর্ম সিভিল কোড) প্রণয়নের দিকে এগোচ্ছি।
সেই লক্ষ্যেই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘মুসলিম বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ নিবন্ধন আইন-১৯৩৫’, যার অধীনে ৯৪ জন মুসলিম রেজিস্ট্রার এখনও কাজ করছে, তা বাতিল করা হয়েছে।
এর অর্থ এই আইনের অধীনে আর কোনো মুসলিম বিবাহ বা বিবাহ বিচ্ছেদ নিবন্ধিত হবে না। এবার থেকে মুসলিমদের বিবাহ বা বিবাহ বিচ্ছেদ নিবন্ধনের বিষয়টি বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে সংশ্লিষ্ট জেলা শাসক অথবা জেলা রেজিস্টার দেখবেন।’
মন্ত্রিসভার বৈঠকে কাজীদের এককালীন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পর্যটন মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আসামে ৯৪ জন নথিভুেক্ত কাজী রয়েছেন, যারা ১৯৩৫ সালের মুসলিম বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ নিবন্ধন আইন অনুযায়ী বিয়ে ও ডিভোর্স নথিভুক্ত করতে পারতেন।
কিন্তু মন্ত্রিসভায় গৃহীত নতুন সিদ্ধান্তের ফলে তাদের হাতে আর সেই ক্ষমতা থাকবে না। সেক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ বাবদ সেই সমস্ত কাজীদের এককালীন ২ লাখ রুপি প্রদান করা হবে। শীঘ্রই এই মর্মে জেলা প্রশাসনের তরফের নির্দেশিকা জারি করা হবে।
শনিবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা লিখেছেন, ‘২৩.০২.২০২৪ তারিখে রাজ্য মন্ত্রিসভা বহু পুরনো আসাম মুসলিম বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ নিবন্ধন আইন বাতিল করার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কারণ সেই আইন অনুযায়ী আইনসিদ্ধ ভাবে কোনো মেয়ের বয়স ১৮ এবং ছেলের বয়স ২১ বছর না হলেও তাদের বিবাহ নিবন্ধনের অনুমতি দেওয়ার বিধান ছিল। কিন্তু শুক্রবার রাজ্য মন্ত্রিসভায় গৃহীত এই সিদ্ধান্ত বাল্যবিবাহের সংখ্যা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ হতে চলেছে।’
ভারতের সব ধর্মের মানুষের জন্য বিয়ে, বিবাহ বিচ্ছেদ, জমি-সম্পত্তি, দত্তক, উত্তরাধিকার সম্পর্কিত এক এবং অভিন্ন আইন প্রচলনের কথা বলা হয়েছে এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে। ইতোমধ্যেই বিজেপি শাসিত ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্য বিধানসভায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সম্পর্কিত বিল পাস হয়েছে। স্বাধীনতার পর ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিলি পাশ হয় উত্তরাখন্ডে।