প্রকাশ: শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৫:০৩ অপরাহ্ন
গাইবান্ধায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মচারীর মৃত্যূর পর জমি বিক্রয়ের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে ভাই ও ভাতিজাদের দ্বন্দ্বে মরদেহ তিনদিন পড়ে থাকার পর অবশেষে দাফন করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের হস্তক্ষেপে পলাশবাড়ি উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের শাকোয়া মাঝিপাড়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের ওই কর্মচারীর নাম মোতাহার হোসেন মুন্সী (৭৫)। তিনি ওই দপ্তরে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি অবসরে যান।
এলাকাবাসী সূত্রে জানায়, চাকরি জীবন থেকে অবসরে গেলেও ব্যক্তি জীবনে নিঃসন্তান মোতাহার হোসেন স্ত্রী মাসুমা বেগমকে নিয়ে ধানমন্ডির কলাবাগান এলাকায় নিজস্ব বাড়িতে থাকতেন। কিছুদিন আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। এসময় তিনি ঢাকায় এক খন্ড জমি দুই কোটি ১৮ লক্ষ টাকায় বিক্রয় করেন। এরপর গত এক সপ্তাহ আগে তার অসুস্থতা বৃদ্ধি পেলে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে মারা যান মোতাহার হোসেন। পরদিন মরদেহ এ্যাম্বুলেন্স যোগে জন্মস্থান পলাশবাড়ী উপজেলার সাকোয়া মাঝিপাড়া গ্রামে নিয়ে আসেন স্ত্রী মাসুমা বেগম।
এসময় জানাজা ও মরদেহ দাফনে বাধা দেয় মোতাহার হোসেনের ছোট ভাই নজরুল ইসলাম মুন্সী ও তার ভাতিজা হাবিবসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। ওয়ারিশরা মোতাহারের স্ত্রী মাসুমা বেগমের কাছে জমি বিক্রয়ের ২ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা কোথায় এবং কোন ব্যাংকে আছে তা জানতে চান। এতে তাদের মধ্যে বিবাদ বাধে। পরে স্থানীয়দের চেষ্টাতেও দ্বন্দ্বের নিরসন না হলে মরদেহ বাড়ির উঠানেই পড়ে থাকে।
এসময় ভাই-ভাতিজারা অভিযোগ তোলেন, মোতাহার হোসেন তার নিজ নামের জমি বিক্রয় ২ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা স্ত্রী মাসুমা বেগমের নামে ব্যাংকে রাখেন। মোতাহার বেশি অসুস্থ হলে মাসুমা বেগম গোপনে ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা উত্তোলন করে সরিয়ে ফেলেন। পরে আর্থিক দ্বন্দ্বে লাশ দাফন না হওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে গত বৃহ¯পতিবার সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থলে হাজির হন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পলাশবাড়ী থানা পুলিশ।
তারা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ উভয়কে নিয়ে বৈঠক করেন । বৈঠকে মোতাহার হোসেনের স্ত্রী মাসুমা বেগম মোতাহার হোসেনের ভাই ও ভাতিজাদের ৬০ লক্ষ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলে পুলিশ সকলের উপস্থিতিতে জানাজা নামাজ শেষে মোতাহার হোসেনের মরদেহ দাফন করা হয়।
পলাশবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরজু মো. সাজ্জাদ বলেন, অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে তিন দিনেও মরদেহ দাফন করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পরে স্থানীয়দের নিয়ে বৈঠক করে দ্বন্দ্বের নিরসন করে উভয় পক্ষের সমঝোতায় ওই রাতেই মরদেহ দাফন করা হয়।