তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থি প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে ক্ষমতায় আসার পর দ্বীপটি সফর করেন দুই মার্কিন কংগ্রেসম্যান। তারা নিজ দেশে ফিরে যাবার পরই, তাইওয়ানের ওপর সামরিক চাপ বাড়িয়েছে চীন।
তাইওয়ানের দিকে ৩৩টি যুদ্ধবিমান ও ছয়টি নৌযান পাঠিয়েছে বেইজিং। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে, ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নিজস্ব বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে।
১৩ জানুয়ারি তাইওয়ানের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি ও সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকেই তাইওয়ানের দিকে নিয়মিত যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে চীন। তবে শনিবারে এসে যুদ্ধ বিমান পাঠানোর সংখ্যাটি সর্বোচ্চ।
শুক্রবার দুই মার্কিন কংগ্রেসম্যান তাইওয়ানে তাদের তিন দিনের সফর শেষে ফিরে যাওয়ার পর, এই সামরিক চাপ বাড়িয়েছে চীন। উইলিয়াম লাই চিং-তে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসাবে এমি বেরা এবং মারিও ডিয়াজ-বালার্ট তাইওয়ান সফরে আসেন।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৩৩টি যুদ্ধবিমানের মধ্যে ১৩টি চীন ও তাইওয়ানকে বিভক্তকারী মধ্যরেখা পার হয়েছে।
মন্ত্রণালয় থেকে আরও জানানো হয়েছে, দুটি চীনা বেলুন তাইওয়ানের উত্তর ও দক্ষিণ অংশে উড়ে যাওয়ার সময় মধ্যরেখাটি অতিক্রম করে। অবশ্য তারপর তাদের আর দেখা যায়নি।
আলোচনায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্র
চলমান উত্তেজনা থামাতে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে দুই পরাশক্তি। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
আলোচনায় অংশ নিতে থাইল্যান্ডে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান ও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তবে এই দুজনের মধ্যে বৈঠকটি এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে কিনা তা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেছেন, ‘কৌশলগত যোগাযোগ ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে’ গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তারই ধারাবাহিকতায় ব্যাংককের এই বৈঠক।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে কিছুটা ধারণা দিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন। তিনি বলেছেন, ‘বৈঠকে চলাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং তাইওয়ান এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের বিষয়ে চীনের অবস্থান স্পষ্ট করবেন এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করবেন।’
১৯৪৯ সাল থেকে তাইওয়ানে রয়েছে স্বাধীন সরকার। কিন্তু স্ব-শাসিত দ্বীপটিকে নিজেদের অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে আসছে চীন।
এদিকে, ১৯৭৯ সালে হওয়া তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্ট-এর আওতায় তাইওয়ানের প্রতিরক্ষায় সমর্থন দিতে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
কূটনৈতিক মিত্র হারাচ্ছে তাইওয়ান
চীন এবং তাইওয়ানের মধ্যকার এই উত্তেজনা শুধু বেইজিং এবং ওয়াশিংটনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর প্রভাব রয়েছে বিস্তৃত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও। সেখানে নিজেদের প্রভাব আর বলয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে চীন। আর তাই কূটনৈতিকভাবেও তাইওয়ানকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা রয়েছে বেইজিংয়ের।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্র নাউরু চলতি মাসের শুরুতে তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এবং বেইজিংয়ের কূটনৈতিক স্বীকৃতি অর্জনের কথা জানিয়েছে।
প্রতিবেশী ১২টি দ্বীপ রাষ্ট্রের মধ্যে একমাত্র টুভালু আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ানকে সমর্থন দিয়েছে। আশঙ্কা রয়েছে, তারাও নিজেদের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে পারে। সম্প্রতি সেখানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার ফল ঘোষণায় জানা গেছে, পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন তাইওয়ানপন্থি প্রধানমন্ত্রী কাউসিয়া নাতানো।
১৯৭৯ সাল থেকে তাইওয়ানের কূটনৈতিক মিত্র হিসেবে সমর্থন যুগিয়ে আসছে টুভালু। সেই বন্ধুত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন নাতানো। কিন্তু তিনি ভোটে হেরে যাওয়ার পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে।
ক্ষমতার দৌড়ে এগিয়ে থাকা অন্য রাজনীতিবিদ সেভে পেনিউ বলেছেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করা উচিত। টুভালুর স্বার্থ রক্ষায় তাইওয়ান বা চীনের মধ্যে কাকে প্রয়োজন বেশি, তা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নতুন সরকার।