প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৪, ৭:৫৪ অপরাহ্ন
'নারী নেতৃত্ব হারাম' বলে বক্তব্য দেয়া বিতর্কিত সেই ইউপি চেয়ারম্যান ইকরাম ইজারাদারের বিরুদ্ধে অবশেষে মামলা দায়ের হয়েছে। সোমবার (২২জানুয়ারী) রাতে মোংলা থানায় এ মামলা দায়ের করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ মামলা নং ২৫/২২-০১-২০২৪ইং।
মামলার বাদী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোংলা-রামপালের (বাগেরহাট-০৩ আসন) স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক নির্বাচনী সভায় 'নারী নেতৃত্ব হারাম' বলে অবমাননাকর ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২এর অনুচ্ছেদ ৭৭এর বিধান এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮এর বিধি ১১(ক) লঙ্ঘন করেছেন। তাই এ সংক্রান্ত নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে বিতর্কিত বক্তব্য প্রদাণকারী ইউপি চেয়ারম্যান ইকরাম ইজারাদারের বিরুদ্ধে গনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২এর অনুচ্ছেদ ৭৩এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮এর বিধি ১৮এর আদেশে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
‘নারী নেতৃত্ব হারাম’ বলে বাগেরহাট-০৩ (মোংলা-রামপাল) আসনে নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে ভোট চেয়ে আলোচনায় আসেন ইকরাম ইজারাদার। পরে তাকে এ ঘএনায় তলব করেন নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান বাগেরহাট যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ (১ম আদালত) আদালতের বিচারক ওবায়দা খানম।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচারণ বিধিমালার ১১(ক) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণাকালে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য প্রদাণ বা কোন ধরণের তিক্ত (উস্কানিমূলক বা মানহানিকর) বক্তব্য, লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিকে আঘাত লাগে এমন কোন বক্তব্য প্রদাণ করতে পারবেন না।
কিন্তু উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান ইকরাম ইজারাদার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তাঁর ইউনিয়নে গত ৩০ডিসেম্বর ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস আলী ইজারদারের নির্বাচনী এক সভায় বক্তব্যে বলেন, নারী নেতৃত্ব হারাম, আমরা গজবের ভিতরে নিমজ্জিত আছি। এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। জনমনে কোন স্বস্তি নেই, শান্তি নেই, তার কারণ- নারী নেতৃত্ব হারাম। নারী নেতৃত্বের অধীনে আমরা এখানে রয়েছি। আমাদের ভোটটা আমরা হাবিবুন নাহারকে (আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী) দুইবার দিয়ে আমরা নারী নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করছি। তাই আমাদের এখানে কোনো সুখ-শান্তি অবস্থান করে না। যেটা সত্য, সেই কথা আমি এখানে আপনাদের কাছে বলে গেলাম। উনি একজন নারী, উনি রাজনীতি আর সমাজনীতির বোঝেন কি? কিছুই বোঝেন না। এরপর তার এই বক্তব্যের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ইস্যুতে সংসদ নির্বাচনের পরে তাকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণ ও গ্রেফতারের দাবীতে মোংলায় কয়েক দফা বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
ইকরাম ইজারাদার মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়ন পরিষদে ২০২১সালে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন।
মোংলা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে. এম আজিজুল ইসলাম বলেন, সংসদ নির্বাচনে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করায় ইউপি চেয়ারম্যান ইকরাম ইজারাদারের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের হয়েছে। এখন তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।