সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে ফের মহাখালী এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত প্রকাশ না করায় তাদের পুনরায় সড়ক অবরোধ করেছেন। এর ফলে আবারও নতুন করে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে মহাখালী রেলক্রসিং এলাকায় সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই অবরোধ চলে। পরে অবরোধ তুলে নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আবার নতুন করে তিতুমীর কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্তি বাতিল করে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে সড়ক-রেলপথ-ফ্লাইওভার অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের ছোঁড়া পাথরে রক্তাক্ত আহত হয়েছে এক শিশুসহ তিন জন। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি। তারা মহাখালী ফ্লাইওভারও অবরোধ করে রাখেন। এ কারণে রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় এবং দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
এর আগে অবরোধ তুলে নেয়ার সময় শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না মিললে তারা কলেজে ফিরে যাবেন না। এরপর দুপুরে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করার প্রস্তাব দেয়া হয়। তাতে সাড়া দিয়ে বিকেল ৩টার দিকে সচিবালয়ে যান তিতুমীরের ১২ শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল। এরপরই তিতুমীর কলেজের আরো একদল শিক্ষার্থী একই দাবিতে মহাখালী আমতলী সড়ক অবরোধ করে রাখে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের সদস্য মাহামুদুল হাসান জানান, তাদের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা শিক্ষা উপদেষ্টা অথবা সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় করতে কমিশন গঠনসহ গ্রহণযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট আশ্বাস পেলে তারা কর্মসূচি স্থগিত রাখবেন। আরা যদি সে ধরণের কোনো আশ্বাস সরকার না দেয়, তাহলে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে শিগগির নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন।
একই দাবিতে গত দুই মাসে একাধিকবার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত ২৪ অক্টোবর একই দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন তারা। তাদের আন্দোলনে রাজধানীজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। তারা সরকারকে দ্রæত এ সমস্যার সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন।
মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রায় ৪ ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নিলে ট্রেন চলাচল এখন স্বাভাবিক হতে শুরু হয়। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে জানা যায় বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে ট্রেন চলাচল আবার শুরু হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বেরিয়ে সাড়ে ১১টার দিকে মহাখালীতে সড়ক অবরোধ করেন এবং মহাখালী ওভারব্রিজের নিচে অবস্থান নেন। এ সময় তারা একটি ট্রেন থামানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু চালক ওই ট্রেনটি থামাতে না পারায় চলতে থাকে। লোহার বার দিয়ে রেললাইন অবরোধ করে রাখা হলেও ট্রেনটি চলতে থাকায় শিক্ষার্থীরা মিছিল থেকে ট্রেনের দিকে ঢিল ছুড়তে থাকে। এর ফলে ট্রেনে থাকা এক শিশু এবং আরও কিছু যাত্রী আহত হন। প্রাথমিকভাবে আহত শিশু ও অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি।
এ প্রসঙ্গে কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন জানান, প্রায় চার ঘণ্টা অবরোধের পর শিক্ষার্থীরা মহাখালী এলাকার রেললাইনের অবরোধ তুলে নিলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে দুটি লাইনেই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে মহাখালী, বনানী, তেজগাঁও ও গুলশানসহ আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থীরা সড়ক ছাড়লেও যানচলাচল স্বাভাবিক হয়নি। ট্রাফিক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যানজট নিরসনে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। এদিকে শিক্ষার্থীদের অবরোধে তিনটি ট্রেন আটকা ছিল। ব্যাহত হয় রেল যোগাযোগ। অবরোধ তুলে নেওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
সাড়ে চার ঘণ্টার অবরোধে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। এক ভুক্তভোগী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘দাবি যৌক্তিক হলে সরকারের কাছে গিয়ে তা পেশ করুক শিক্ষার্থীরা। রাস্তাঘাট বন্ধ করে মানুষকে জিম্মি করে কেন আন্দোলন করা হচ্ছে?’
অন্যদিকে উপক‚ল এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে দেওয়ার চেষ্টাকালে ট্রেনে হামলার ঘটনাও ঘটে। ট্রেনলাইন অবরোধের ফলে চলমান ট্রেন ও কমলাপুর রেলস্টেশনে প্রবেশ বা বের হতে পারছে না। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে কেউ কেউ পায়ে হেঁটে গন্তব্যের পথে রওনা হন। তাদের কারও কারও হাতে মালপত্রের ভারী বস্তা, ব্যাগ দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার সঙ্গে থাকা বয়স্ক স্বজনদের ধরে ধরে কিংবা শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে হেঁটে যান। অবরোধের কারণে সৃষ্ট ভোগান্তি নিয়ে অনেক সাধারণ মানুষকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তাঁদের ভাষ্য, দাবি যৌক্তিক হলে সরকারের কাছে গিয়ে তা পেশ করুক শিক্ষার্থীরা। রাস্তাঘাট বন্ধ করে, মানুষকে জিম্মি করে, পেরেশানি দিয়ে কেন আন্দোলন করা হচ্ছে?
এদিকে, মহাখালীতে ট্রেনে পাথর ছুঁড়েছেন শিক্ষার্থীরা, আর পাথরের আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছে শিশুসহ অনেকে। পাথরের আঘাতে ট্রেনের জানালার কাঁচ ভেঙে যাত্রীরা আহত হন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম ঘটনার জানান, উপক‚ল এক্সপ্রেস ট্রেনটি মহাখালী লেভেল ক্রসিং অতিক্রম করার সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে ট্রেনটিতে হামলা চালানো হয়। এতে ট্রেনের জানালার ভেঙে যায়।
এ প্রসঙ্গে বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রাসেল সরোয়ার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে মহাখালী অবরোধ করা শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল মন্ত্রণালয়ে গিয়েছেন। পরে বিকাল চারটার দিকে তারা সড়ক ছেড়ে দেন। এর আগে সকালে অবরোধ চলাকালে শিক্ষার্থীরা চলন্ত ট্রেনে ইটপাটকেল ছোঁড়ে। এতে ট্রেনে যাত্রী শিশুসহ কয়েকজন আহত হয় বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৪ অক্টোবর একই দাবিতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। সেদিনও তারা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাখালীর আমতলীতে গিয়ে অবস্থান নেন। ফলে মহাখালী, বনানী, গুলশান এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।