শুক্রবার ২ মে ২০২৫ ১৯ বৈশাখ ১৪৩২
 

দুর্গাপুরে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে সুপেয় পানির কষ্টে মানুষ
দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: রোববার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ৬:০০ অপরাহ্ন

সাতটি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী উপজেলা দুর্গাপুর। এ সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে দুর্গাপুর সদর  ও কুল্লাগড়া ইউনিয়নের প্রায় ১০ থেকে ১২টি গ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সহ বাঙালি জনগোষ্ঠীর বসবাস। বছরের পর বছর যুগের পর যুগ পার হলেও আজও সুপেয় পানির সংকট কাটেনি এ দুই ইউনিয়নের । 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার সীমান্ত এলাকার গোপালপুর, ভবানীপুর, ফান্দা, ,লক্ষীপুর ভরতপুর,  সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে পাহাড়ি অঞ্চলে শুকনো মৌসুমে সাধারণ নলকূপ দিয়ে পানি আসে না। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে মাটির গভীরে ২০ থেকে ৫০ ফুট নিচে পাথর থাকায় নলকূপ বা বৈদ্যুতিক পাম্প স্থাপন বেশ ব্যয়বহুল। স্থানীয়ভাবে রিং টিউবওয়েল বসানো হলেও শুকনো মৌসুমে আয়রনের কারণে তাও পানের অযোগ্য হয়ে যায়। তখন তাদের ভরসা হয়ে দাঁড়ায় পাহাড়ি ঝরনার ছড়া ও খালবিলের পানি। স্বাস্থ্যঝুকি জেনেও অনেকটা বাধ্য হয়ে ছড়া, খাল, ঝিরি ও কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে কোন রকম জীবন যাপন করছে এ পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দারা। নারীরা কাঁখে বা মাথায় কলসি নিয়ে পাহাড়ী টিলা থেকে নেমে পানি সংগ্রহ করেন। এ পানি দিয়ে করতে হচ্ছে তাদের রান্না, গোসলসহ সব ধরনের কাজ। খেতেও হচ্ছে সেই পানি। বর্তমানে ওই সব গ্রামের  মানুষের কষ্ট এখন চরম আকার ধারণ করেছে।

গ্রামগুলোতে গিয়ে বিশুদ্ধ পানির অভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবারগুলো জানায়,  দীর্ঘদিন যাবত তাদের পানির জন্য কষ্ট করতে হচ্ছে। পাহাড়ি ছড়ার পানি আর গর্তে জমা ঘোলা পানিই খাবার ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে।এতে পেটের অসুখ, চর্মরোগসহ নানান রোগে আক্রান্ত হতে হয় তাদের । সরকারীভাবে  গ্রামগুলোতে  সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা। 

দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের বাদাম বাড়ি গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী লেমিতা তাজেল বলেন, পানি সংগ্রহের কষ্ট তার প্রায় ৪৮ বছরের। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে  কয়েকবার পাহারের নিচে থাকা গর্ত থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। বয়সের ভারে শরীর সায় না দিলেও দিনে কয়েকবার পাহাড় বেয়ে উঠা-নামা নামতে হয়। 

লক্ষীপুর গ্রামের  জিবলিং সাংমা বলেন, আমার দাদা দাদীরা পানির কষ্ট করে গেছে আমিও করছি এখন। পাহাড়ি ছড়া থেকে থেকে পানি সংগ্রহ করে ওই পানি ছাঁকন করে তা দিয়েই রান্নাবান্না, খাবারসহ সব কাজ করতে হয় । আমরা পাহাড়ি এলাকার মানুষ হিসাবে সরকারের কাছে দাবি জানাই আমাদের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। 
লক্ষীপুর গ্রামের ৮০ বছর বয়সী সারথি হাজং বলেন, ভালা পানি কই পাবো কূয়ার পানিই খাই। অসুখ আর বিসুখ হলেই কী হবো। পানির জন্য অনেক কষ্ট আমার সরকার যদি একটা ব্যবস্থা করাই দেই তাহলে কামই হতো । 

বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠনের সভাপতি পল্টন হাজং বলেন, পাহাড়ী অঞ্চলে পানি সংকট দীর্ঘ দিনের।  সুপেয় পানি সংকটের কারনে নানান অসুখ হয়ে থাকে পাহাড়ী অঞ্চলের বাসিন্দাদের৷ সরকারের কাছে দাবী অতি দ্রুত ওই সব অঞ্চলে একটি  বড় প্রকল্পের মাধ্যমে  পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর বলেন, পাহাড়ী অঞ্চলের বাসিন্দারা রেন ওয়াটার হার্ভেস্টিং করে  যাতে পানির চাহিদা মিটাতে পারে এজন্য একটি প্রস্তাবনা জেলার মাধ্যমে  ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172, বাণিজ্যিক বিভাগ : +8802-58316175,+8801711443328, E-mail: info@jobabdihi.com , contact@jobabdihi.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft