
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে অভাবের তাড়নায় ১ দিনের সন্তান বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক মায়ের বিরুদ্ধে। তবে সেই মা বলছেন সন্তান কে দত্তক হিসেবে দিয়েছেন তিনি।
গতকাল শনিবার (১৯ এপ্রিল) উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের রাণীদীঘি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, তাড়াশ উপজেলার মানিকচাপর গ্রামের চাঁন মিয়ার তিন স্ত্রীর মধ্যে প্রমথ স্ত্রী মারা গেছেন। বাকী দু স্ত্রী এখনো জীবিত। তাদের মাঝে ছোট স্ত্রী আমেনা বেগম (৩৫) তিন দিন আগে জন্ম দেন এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের। নাম রাখা হয় রোজা আকতার। কিন্তু অভাবের তাড়নায় আমেনার কোলজুড়ে আসা সে শিশুটির সকল মায়া ছিন্ন করে মাত্র ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন পাশ্ববর্তী উল্লাপাড়া উপজেলার জংলিপুর গ্রামের নি:সন্তান রতন দম্পতির কাছে। এমনই অভিযোগের গুনজন উঠেছে এলাকায়।
তবে সেই অভিযুক্ত মা বলছেন ভিন্ন কথা। অর্থের বিনিময় নয় বরং অভাবের তারনায়ই এমন কাজ করেছেন তিনি। তার চিকিৎসা বাবদ তাকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ১ দিন বয়সী কন্যা সন্তানটি নিয়ে গেছেন তারা। সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তান দেওয়ার পর থেকেই হতাশায় নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন মা আমেনা বেগম। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে সচেতন মহলের মাঝে আলোচনার ঝড় ওঠে। তারা এ বিষয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা ট্রল করতে থাকেন।
আজ রোববার (২০ এপ্রিল) সকালে একদল সংবাদকর্মী রাণীদীঘি গ্রামে গিয়ে ঘটনার সত্যতা খুঁজে পান। পরিবার ও গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, মানিক চাপর গ্রামের বাসিন্দা চাঁন আলীর তিন স্ত্রীর মধ্যে আমেনা বেগম সবার ছোট। চাঁন মিয়ার প্রথম স্ত্রীর রয়েছে দুই মেয়ে, মেঝ স্ত্রীরও রয়েছে দুই মেয়ে। ছোট স্ত্রী আমেনা বেগমের ঘরে রয়েছে দুই ছেলে ও সর্বশেষ মেয়ে রোজা আকতারের জন্ম দেন।
আমেনা বেগম জানান, বিয়ের পর থেকেই স্বামীর বাড়িতে তার জায়গা হয় হয়নি। তিনি থাকেন তার মেঝ বোন কোহিনুর বেগমের বাড়ি রাণীদীঘি গ্রামে। স্বামী চাঁন মিয়া মাঝে মধ্যে সেখানে মাঝে মধ্যে যাতায়াত করলেও সংসারের কোনো খরচপাতি দেন না তিনি।
খবর নিয়ে জানা যায়, অভাবের তাড়নায় আমেনা বেগমের বড় ছেলে সোহাগ পড়ালেখা ছেড়ে রাজমিস্ত্রির জোগালদার হিসেবে কাজ করে সংসার চালায়। মেঝ ছেলে আলিফের বয়স আট বছর। এরই মাঝে দিন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারে ঘর আলো করে আসে মেয়ে রোজা আকতার। কিন্তু চার মেয়ের পর নবজাতক মেয়ের দায়িত্ব নিতে রাজী হোননি বাবা চাঁন মিয়া। বাধ্য হয়ে আমেনা বেগম এক দিন বয়সী মেয়ে রোজা আকতার কে বিক্রি করে দেন অন্যর কাছে।
আমেনার বড় বোন কোহিনুর বেগম জানা, মেয়ে দেয়ার পর থেকেই আমেনা নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। শুধু মাত্র অভাবের তাড়নায় বুকের ধন কে অন্যর হাতে তুলে দিতে হলো।
রাণীদীঘি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, পরিবারটি শুধুমাত্র অভাবের তাড়নায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। যা ভীষণ মর্মান্তিক। এ ঘটনা কারো কাম্য নয়। কোনো সহৃদয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসলে পরিবারের এমন যন্ত্রণা বহন করতে হতো না।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: নূরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। পরিবারটির সাথে কথা বলে সঠিক তথ্য জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।