মানুষের ওপর জুলুম করা, গালাগাল করা, গিবত করা এবং অন্যায়ভাবে মারধর করা বড় গুনাহ। পরকালে এর প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে নেকি দিয়ে। ফলে তখন নেকির পাল্লা হালকা হয়ে যাবে। হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.)-এর সামনে বসে এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার কয়েকটি গোলাম আছে।
আমার কাছে এরা মিথ্যা কথা বলে, আমার সম্পদে ক্ষতিসাধন (খিয়ানত) করে এবং আমার অবাধ্যতা করে। এ কারণে তাদের আমি বকাবকি ও মারধর করি। তাদের সঙ্গে এমন ব্যবহারে আমার অবস্থা কী হবে?
তিনি বলেন, তারা যে তোমার সঙ্গে খিয়ানত করে, তোমার অবাধ্যতা করে এবং তোমার কাছে মিথ্যা বলে, আর এ কারণে তাদের সঙ্গে তুমি যেমন আচরণ করো—এসবের হিসাব-নিকাশ হবে। যদি তোমার দেওয়া শাস্তি তাদের অপরাধের সমান হয়, তবে ঠিক আছে।
তোমারও কোনো অসুবিধা হবে না, তাদেরও কোনো অসুবিধা হবে না। যদি তোমার দেওয়া শাস্তি তাদের অপরাধের তুলনায় কম হয়, তাহলে তোমার জন্য অতিরিক্ত (সওয়াব) রয়ে গেল। আর তোমার দেওয়া শাস্তি যদি তাদের অপরাধের তুলনায় বেশি হয়, তাহলে অতিরিক্ত অংশের জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।
বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে লোকটি চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে আলাদা হয়ে গেল।
রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলার কিতাবে তুমি কি এ কথা পড়ো নাই—‘আমি কিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করব। সুতরাং কারো ওপর কোনো জুলুম করা হবে না। কারো বিন্দু পরিমাণও কিছু কৃতকর্ম থাকলে আমরা তা-ও হাজির করব। আর হিসাব সম্পন্ন করার জন্য আমরাই যথেষ্ট।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৪৭)
লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কসম! তাদের মধ্যে ও আমার মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ছাড়া আমার ও তাদের কল্যাণের আর কোনো পথ দেখছি না।
আপনাকে আমি সাক্ষী রেখে বলছি, তাদের সবাই এখন থেকে মুক্ত। (তিরমিজি, হাদিস : ৩১৬৫)
দুনিয়ার জুলুম, গালি, গিবত ও অপবাদের ক্ষতিপূরণ পরকালে নেক আমল দিয়ে আদায় করতে হবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা কি জানো নিঃস্ব কে? তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে নিঃস্ব হচ্ছে ওই ব্যক্তি, যার নগদ অর্থ নেই, কোনো সম্পদও নেই।
রাসুল (সা.) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে ওই ব্যক্তি হচ্ছে নিঃস্ব, যে কিয়ামত দিবসে নামাজ, রোজা, জাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে এবং এর সঙ্গে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত (হত্যা) করেছে, কাউকে মারধর করেছে ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল থেকে এ ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে, অন্য ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে। এভাবে সম্পূর্ণ বদলা (বিনিময়) নেওয়ার আগেই তার সৎ আমল নিঃশেষ হয়ে গেলে তাদের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮১)
মহান আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।