চীন সফরে গিয়ে এক বৈঠকে মিয়ানমার জান্তাপ্রধান বলেছেন, বিদ্রোহীরা সত্যিকারের শান্তি চাইলে তাদের জন্য আলোচনার দরজা খোলা। মিন অং হ্লাইং চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াংয়ের সঙ্গে তার দেশের গৃহযুদ্ধের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া বৃহস্পতিবার বলেছে, ২০২১ সালের অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলের পর বিদেশে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধানের এটাই প্রথম সফর। মিন অং হ্লাইং মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকালে চীনে পৌঁছেছেন।
জান্তাপ্রধান এই সফরে চীনে বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক বৈঠক করবেন।
গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার (জিএনএলএম)-এর বৈঠকের বিবরণ অনুসারে, জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কুনমিংয়ে এক বৈঠকে চীনের প্রধানমন্ত্রী লিকে বলেছেন, ‘সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো রাজি হলে সামরিক বাহিনী শান্তির জন্য প্রস্তুত।’
জিএনএলএম প্রতিবেদন অনুসারে, মিন অং হ্লাইং লিকে বলেছেন, ‘যদি তারা (বিদ্রোহীরা) সত্যিকারের শান্তি চায় তাহলে শান্তির দরজা সব সময় খোলা থাকবে।’
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং জান্তাবিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
গত বছর থেকে বিদ্রোহীদের বড় ধরনের আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে মিয়ানমার জান্তা বাহিনী। এর পর থেকে তারা বেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিরোধীরা মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকা এবং চীনের সীমান্তের কাছে একটি বিশাল এলাকাও দখল করে নিয়েছে।
চীন মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ এবং রাজনৈতিক সমর্থন প্রদান করে আসছে।
এমনকি তাদের নৃশংস দমন-পীড়নের বিষয়টি এড়িয়ে জেনারেলদের সমর্থন করছে। তবে তাদের দোরগোড়ায় বিশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বিগ্ন বেইজিং।
কুনমিং বৈঠকের বিষয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লি মিয়ানমারে চীনা নাগরিক ও প্রকল্পগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। গত মাসে মান্দালেতে চীনা কনস্যুলেট লক্ষ্য করে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবে বেইজিং এ নিয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
সিনহুয়া প্রতিবেদন অনুসারে, লি ছিয়াং গৃহযুদ্ধের বিষয়ে মিয়ানমার জান্তার কৌশল সমর্থন করেননি। তিনি মিন অং হ্লাইংকে বলেছেন, চীন ‘রাজনৈতিক পুনর্মিলন ও রূপান্তরকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য’ মিয়ানমারকে সমর্থন করেছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বেইজিং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পতনের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধরত কিছু গণতন্ত্রপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ওপর পশ্চিমা প্রভাব নিয়ে সন্দেহ করছে।
মিয়ানমার চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি মূলত দুই হাজার বছর আগে চীনের জিয়ান প্রদেশ থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত যে বাণিজ্যিক পথ গড়ে উঠেছিল, তার আধুনিকতম সংস্করণ।