মোংলায় বিএনপি নেতাকে গুম ও খুনের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ-সংবাদ সম্মেলন
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশ: বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪, ৫:০০ অপরাহ্ন
আওয়ামী সরকারের আমলে মোংলায় অপহরণ ও গুমের শিকার হয়ে খুন হওয়া বিএনপি নেতা মাহে আলমের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবীতে মানববন্ধন এবং সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবি দলের উপজেলা কমিটির সভাপতি মাহে আলমকে অপহরণ ও গুম করে হত্যা করা হয় ২০২৩সালের ১০এপ্রিল। এরপর প্রায় দেড় বছরেও তার হত্যা রহস্যের কূল কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।
এ ঘটনায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই দাবি করা হয়, পূর্বপরিকল্পিতভাবে অপহরণ ও গুম করে সুন্দরবনের করমজলে নিয়ে হত্যা করা হয় মাহে আলমকে। তবে প্রকৃত অপরাধীরা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।
আজ বুধবার (২৩অক্টোবর) বেলা ১১টা পৌর শহরের পৌর মার্কেট চত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও দুপুর ১২টায় মোংলা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সাথে এসব কথা বলে প্রশ্ন রাখেন অপহরণ, গুম ও খুনের শিকার মাহে আলমের ছেলে মোঃ সোহেল রানা এবং সুমন রানা।
তারা বলেন, তখন মোংলা পোর্ট পৌরসভার সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে মোংলা থানায় একটি অপহরণ মামলা করতে গেলে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত ওসি বিকাশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, আমি আমার সিনিয়রদের নির্দেশ না পেলে মামলা নিতে পারবো না। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে ২০২৩সালের ১১মে মোংলা থানায় মামলা দায়ের হয়।
এর আগে গত বছরের ৭এপ্রিল উপজেলার চিলা উনিয়নের বিথিকা নাথের ছেলে হিলটন নাথ (২০)সহ ৩/৪জন সুন্দরবনের জোংড়া এলাকায় অবৈধভাবে মাছ ধরতে গেলে বনরক্ষীদের অভিযানে হিলটন নাথ (২০) নিখোঁজ হয়। পরবর্তীতে ১৩এপ্রিল সন্ধ্যায় সুন্দরবনের করমজলে অর্ধগলিত একটি মৃতদেহ উদ্ধার হয় যা বিথিকা নাথ ( হিলটন নাথের মা), বেলায়েত সরদার ও বেল্লাল সরদার হিলটন নাথের মৃতদেহ বলে জোর দাবীর প্রেক্ষিতে মৃতদেহ বুঝে নেয়। তবে দীর্ঘ তিন মাস ১০দিন পর রিপোর্টের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, হিলটন নাথ বলে সৎকার করা মৃতদেহ মূলত অপহরণ ও হওয়া মাহে আলমের।
সংবাদ সম্মেলনে মৃত মাহে আলমের ছেলে সুমন রানা আরও বলেন, গত বছরের ১৩এপ্রিল পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে কেন সত্য লুকানো হলো? কেন সুরতহাল রিপোর্টের সাথে মৃতদেহের সাথে পাওয়া আলামতের কোন মিল নেই? আমার বাবার কাছে থাকা মোবাইল ফোন থেকেই তার পরিচয় পাওয়া যেত। তাছাড়া উত্তোলিত মৃতদেহের পরিধেয় বস্ত্র, আলামত ও শরীরে কোন কাটা ছেঁড়ার চিহ্ন না থাকায় আমরা নিশ্চিত পোস্ট মর্টেম না করে ভূয়া রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। কিন্তু কেন এটি করা হলো? ভূয়া সুরতহাল রিপোর্ট, ভূয়া পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট, থানায় মামলা না নেয়া, লাশ গুম, হিলটন নাথ হিসেবে সমাধি এসবই প্রমাণ করে এটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকান্ড। আর এই পরিকল্পনার সাথে নানাভাবে যুক্ত ছিলেন বা ঘটনাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করেন আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ, সুন্দরবনের সাবেক জলদস্যু বেল্লাল সরদার, বেলায়েত সরদার, বোট মাঝি মোঃ মোশারফ হোসেন, বনপ্রহরী মিজানসহ পুলিশের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা।
সুমন রানা আরো বলেন, আমি আমার মৃত বাবাকে খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু বিচার বিভাগ ও পুলিশ বিভাগের কাছে আমার পিতা মাহে আলমকে অপহরণ, খুন ও লাশ গুমের মামলাটি আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রেজিমের প্রভাবমুক্ত করে দ্রুততম সময়ে তদন্ত সম্পন্ন, প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারসহ সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানান।
মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি নেতা মোঃ জসিম উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান মানিক, এমরান হোসেন, শেখ রুস্তম আলী, খোরশেদ আলম, মোঃ আলাউদ্দিন, অধ্যক্ষ মোঃ সেলিম, মোংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আহসান হাবিব হাসান, কমলা বেগম, মোঃ জাহিদ হোসেন, মাহে আলম'র দুই ছেলে সোহেল রানা ও সুমন রানা।