প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৬:৪৯ অপরাহ্ন
দিনমজুর আব্দুর রশিদ যখন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালের বেডে ছটফট করছেন, তখন স্ত্রী রত্নার গর্ভে জন্ম নেয় এক শিশু সন্তান। রত্না চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। স্বামীকে বাঁচাতে প্রয়োজন অনেক টাকার। তার নাভীর নিচে ৯টি ও পায়ে কয়েক ছররা গুলি লেগেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অপারেশন করতে হবে। উপায়ন্তর না মাত্র ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনদিনের শিশু সন্তানকে কুড়িগ্রামের এক নিঃসন্তান পরিবার কাছে তুলে দেন।
এ বিষয়ে নবজাতকের মা রোকেয়া বেগম বলেন, আন্দোলনে আমার স্বামীর গুলি লাগে। হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে আমার স্বামীর অপারেশন হয়। অপারেশনের পর আমার স্বামীর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এর মধ্যেই আমার বাচ্চা হয়। সেই সময় হাতে টাকা ছিল না। স্বামীর চিকিৎসা করাতে হবে, তাই তিনদিনের বাচ্চাকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিছি। সেই টাকা দিয়ে স্বামীর চিকিৎসা করছি। খারাপ তো লাগবে। কিন্তু সেই সময় কোনো উপায় ছিল না। স্বামীকে তো বাঁচাতে হবে। স্বামীকে আরও অপারেশন করতে হবে। সুস্থ হতে আরও দু-এক বছর লাগবে। নিজের কোনো জায়গা-জমি নাই। মানুষের বাসায় থাকি। সরকারের কাছে অনুরোধ আমার স্বামী যেন সুস্থ হয়ে কিছু করতে পারে।
আব্দুর রশিদ বলেন, স্ত্রীর প্রসবের ব্যথা ওঠায় হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমি টিকিট কাউন্টারের সামনে পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হই। পরে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন স্থানীয়রা। আমি চিকিৎসা নিয়ে বাসায় আসি। এর মধ্যে আমার স্ত্রী একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। বাসায় তিনদিন ছিলাম। পরে গ্রামবাসী সহযোগিতা করে আমাকে আবারও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছে। হাসপাতালে অপারেশন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল রায়হান বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। আমরা দ্রুত বাচ্চাটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
এদিকে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে শিশু সন্তানটিকে ফিরিয়ে আনতে সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আসাদুজ্জমান, মা রত্না ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন শিক্ষার্থী কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বলে জানা গেছে।