বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
 

ভারতের ভিত্তিহীন বিবৃতিতে ঘটনার ভুল উপস্থাপন হয়েছে: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়    চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে বিকৃত তথ্য ছড়াচ্ছে ভারত: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়    অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার, বিচার নিশ্চিতের দাবি হাসনাত ও সারজিসের    চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা, আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ    একদিনের ব্যবধানে সোনার দাম আরও কমলো    ২০১ রানের বড় হার বাংলাদেশের    চলতি মাসেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু দেড়শ ছাড়িয়েছে   
মন্তব্য কলাম
সময় যোগ্য নেতৃত্বের উজ্জল ভবিষ্যৎ
মোঃ আক্তার হোসেন রিন্টু
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৪, ৩:০৫ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন রাজনৈতিক দল। এই রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে নানা সময়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতি করা বা রাজনৈতিকদল গঠণ করার অধিকার যে কারও রয়েছে। হ্যা, আলোচনা-সমালোচনা করারও অধিকার রয়েছে একটি গঠণমূলক প্রক্রিয়ায়। 

আমরা দেখেছি এ দেশে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় এসে নতুন রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হয়েছে এবং সেই দল পরবর্তীতে রাষ্ট্র পরিচালনাও করেছে। যেমন বাংলাদেশ জাতীয়তাবদী দল (বিএনপি) এবং জাতীয় পার্টি এ দেশে ক্ষমতায় ছিল। যদিও ক্ষমতায় আসার প্রক্রিয়া নিয়ে অথবা দেশ পরিচালনার প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক কথা বলার সুযোগ রয়েছে। আমি সেই আলোচনা আজ করবো না। আমার আলোচনার বিষয় ভিন্ন। 

সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি বিপ্লব হয়ে গেল। এদেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা পেলাম এক নতুন বিজয়। এ জন্য ঝরেছে অনেকগুলো তাজা প্রাণ। রক্তের দাগ এখনও রাজপথে। এখনও বাতাসে লাশের গন্ধ। জনমনের শঙ্কা-ভয়-আতঙ্ক কাটছে না। সাভাবিক ঘটনাগুলোর মধ্যে এখনও অস্বাভাবিকের উদ্বেগ উঁকি দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতেও আমাদের পথ চলতে হচ্ছে একটি সুন্দর আগামীর জন্য। সেই সুন্দর আগামীর জন্য অপেক্ষমান এ দেশের কোটি কোটি মানুষ। অপেক্ষায় আছেন শহীদ আবু সাঈদ-মুগ্দ্ধরা। সেই অপেক্ষার নিরবতা ভেঙ্গে রাষ্ট্র আবার চলতে শুরু করেছে। সরব হয়ে উঠছে বাংলার প্রতিটি প্রান্তর। কিন্তু যে প্রশ্নটি এখন সবার সামনে এসেছে, তা হলো-আবার কী কোনও দিন দেখতে হবে এ দেশের সাধারণ মানুষের রক্তে রাঙানো কোনও শাসকের হাত? নাকি ‘স্বাভাবিক মনে হবে মহৎ সত্য বা রীতি কিংবা শীল্প অথবা সাধনা’। 

না আমরা আর এমন দৃশ্য দেখতে চাই না। শকুন আর শেয়ালের খাদ্য হতে দিতে চাই না আমাদের হৃদয়। স্বাধীন বাংলাদেশের এই ক্রান্তি লগ্নে হাল ধরেছেন যারা তাদের সকলকে প্রাণঢালা অভিনন্দন। 

বিশেষ করে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানাই জাতির এই ক্রান্তিকালে এতবড় একটি দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য। এই ব্যাক্তিটি সম্পর্কে আমাদের দেশে তো বটেই গোটা বিশ্বেরই একটি ইতবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ড. ইউনূস সম্পর্কে অল্প বিস্তর লিখতে গেলে বড়ই কৃপণতা মনে হবে। তবে দু’একটি কথা না বল্লেই নয়। মূলত তিনি ছিলেন শিক্ষকতা পেশায়। সেখান থেকে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা। পরে ওই ব্যাংককে সাথে নিয়ে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছিলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সেই থেকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বেও সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু নিজ দেশেই গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ছিলেন কোণঠাসা। নানা আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ড.ইউনূস। এমনকি একটা সময়ে কর্তৃত্ব হারিয়েছিলেন নিজের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের। এর কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করেন ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরাতে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বেশ আলোচনায় ছিল। এরপর ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন। 

‘মাইনাস টু’ ফর্মুলার পেছনে অধ্যাপক ড. ইউনূসকে একজন মাস্টারমাইন্ড মনে করতেন শেখ হাসিনা। আরেকটি কারণ হলো, নোবেল পুরস্কার অর্জনের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় নাগরিক শক্তি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কার্যক্রম সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলো। অবশ্য এরপর থেকেই মূলত শেখ হাসিনার চোখের মনি থেকে চোখের কাটায় পরিণত হন ড. ইউনূস। একটি বিষয় মনে পড়ছে, আর তা হলো তিনি যখন ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান তখন শেখ হাসিনাই প্রথম অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে। তখন তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন। যাই হোক, আমি যে কথাটি নিয়ে আলোচনা করতে অধির আগ্রহ নিয়ে লিখতে বসেছি তা হলো, ড. ইউনূসের রাজনৈতিক দল গঠণের সময় এখনও রয়েছে। এমন একজন ক্লিন ইমেইজ ব্যাক্তিকে হয়তো দেশের মানুষ স্বাগত জানাতে কোনও প্রকার কৃপণতা বোধ বা কার্পণ্য করবেন না। 

স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে দীর্ঘদিন যে চর্চা আমরা দেখে আসছি, সেই চর্চা থেকে সাধারণ মানুষ বেরিয়ে আসতে চাইছেন। জনগণের সেই ভাবনার জায়গাটা অথবা একটি সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র গঠণের যে আকাঙ্খা রয়েছে তা পুরণ করার সক্ষমতা ড.ইউনূসের রয়েছে। এটি নিয়ে মতবিরোধও হয়তো অনেকেরই থাকতে পারে। তবে সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে একটি সুযোগ কিন্তু এখনও অপেক্ষমান রয়েছে। যেমন সম্প্রতি যে বিপ্লবটি হয়ে গেল, সেই বিপ্লবে যারা নেতৃত্বদান করেছেন ইতোমধ্যেই সেই নেতৃবৃন্দের প্রধান সমন্বয়ক সারজিস আলমসহ অনেকেই একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠণের প্রয়াস ব্যক্ত করেছেন। সেই প্রয়াসের সঙ্গে যদি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে যুক্ত করা হয় তাহলে এ নিয়ে ভিন্নমত হয়তো থাকবে। কিন্তু জনসমর্থনও থাকবে। 

আমরা ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করেছি, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা কমিটিতে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দু’জন সমন্বয়ক। শপথ গ্রহণের পর রাষ্ট্র সংস্কার ও তরুণ নেতৃত্বের কথা তুলে ধরেন সমন্বয়করা। এরপর আলোচনা শুরু হয়- তারা কি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কথা ভাবছেন? 

গত ৮ আগস্ট বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণের পর এ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। 

তিনি বলেন, জনগণ যদি মনে করে তরুণরাই রাষ্ট্রের হাল ধরবে তবে জনগণের সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য তরুণরা প্রস্তুত আছে। পরদিন দুপুরে নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদের উপদেষ্টা হওয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। সেখানে তিনি লেখেন, এটা যেমন তাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্জন তেমনি দেশের মানুষের স্বার্থে স্যাক্রিফাইসও বটে। কারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থাকার কারণে সামনের ইলেকশনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। 

তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের এই অভ্যুত্থানের অন্যতম বড় অর্জন- বাংলাদেশের মানুষ তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বে দেখতে চায়, দেশ গঠনে সামনের সারিতে প্রত্যাশা করে। সারজিস লিখেছিলেন, এই তরুণদের মধ্যে কেউ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থাকবে, কেউ রাজপথে থাকবে। কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্বে এসে নতুন করে ক্যাম্পাসগুলোকে ঢেলে সাজাবে। আবার কেউ হয়তো সংসদে দেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবে।  ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ অথবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘দেশের মানুষ যদি চায়, নিশ্চয় ভবিষ্যতে কোনো একটি ক্ষেত্রে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ’। 

এরপর থেকেই আলোচনায় আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি। ‘তাহলে কি এবার রাজনীতির মাঠেও দেখা যাবে সমন্বয়কদের’- এমন প্রশ্নের জবাবে সারজিস আলম বলেছিলেন, মানুষ ভিন্ন একটি রাজনৈতিক দল তরুণদের নেতৃত্বে দেখতে চায়, যারা সৎভাবে এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে বাংলাদেশে সুন্দর সমাজ গঠন করবে। বাংলাদেশের মানুষের চাওয়ার সে জায়গা থেকে আমাদের মনে হচ্ছে, জাতীয় পর্যায়ে আমরা একটি রাজনৈতিক চিন্তাধারায় যেতে পারি। একই চিন্তায় যদি আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও পাশে দেখি তাহলে আর অপেক্ষা কেন? এখন সময় একজন যোগ্য নেতৃত্বের হাত ধরে আমাদের উজ্জল ভষিত্যের দিকে এগিয়ে চলা।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172. বাণিজ্যিক বিভাগ : +8801868-173008, E-mail: dailyjobabdihi@gmail.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft