বরগুনার আমতলী উপজেলায় সেতু ভেঙে ৯ জন নিহতের ঘটনায় সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্ট নথিটি তলব করেও পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। এতে সেতু নির্মাণের গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়েছে কিনা, তা বের করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। আর এ কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নথি সরবরাহে দায়িত্বরতদের শাস্তির সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
অপরদিকে ভেঙে যাওয়া সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্ট নথির খোঁজ পেতে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করছে বরগুনা এলজিইডি বিভাগ। তবে তদন্ত কমিটি গঠন করলেও গুরুত্বপূর্ণ নথিটির এখনও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। আর এ কারণে সচেতন নাগরিকদের ধারণা সেতু নির্মাণে গুণগত মান নিশ্চিত হয়নি অথবা অন্য কোনো অনিয়ম করায় গায়েব করা হয়েছে সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্ট এ নথি।
বরগুনা সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য তারিক বিন আনসারী সুমন বলেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি, কাগজপত্র অথবা প্রমাণ তখনই লোপাট হয়ে যায় যখন সেখানে কোনো অপরাধ সংগঠিত হওয়ার বিষয় থাকে। নথিটি যদি গায়েব হয়ে থাকে তাহলে ধরে নেওয়া যায় এখানে বড় ধরনের কোনো অপরাধ সংগঠিত হয়েছে, তা নাহলে এটি গায়েব হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। অপরাধ ঢাকতেই সাধারণত তথ্য গোপন করা হয়, অথবা মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়। সব কিছু সঠিক থাকলে সত্য প্রকাশে কোনো বাঁধা থাকবে বলে আমি মনে করি না।
সরেজমিনে তদন্ত শেষে সেতু ভেঙে পড়ার বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, সেতু ভেঙে পড়ার কারণ উদঘাটন করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে সেতু নির্মাণের নথিটি আমরা পাইনি। এ কারণে সেতুটি নির্মাণে গুণগত মান সঠিক ছিল কিনা তা আমরা তদন্ত কমিটি নিশ্চিত হতে পারিনি।
এছাড়া দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, প্রতিবেদনে মাইক্রোবাস চালকের দায়িত্বে অবহেলা ও অপেশাদার আচরণ এবং যাত্রীদের অসতর্কতা, পাশাপাশি সকল সেতু ন্যূনতম গার্ডার ব্রিজে উন্নীত করা, দুর্যোগ সহনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা। কাজের গুণগত মান বজায় রাখাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্ট নথির বিষয়ে বরগুনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ও সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য মো. মেহেদী হাসান খান বলেন, আমাদের কাছে ভেঙে পড়া ওই সেতু নির্মাণের নথি চাওয়া হয়েছে। তবে ১২ থেকে ১৩ বছর আগের হওয়ায় নথিটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। নথি গায়েব হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। নথি খুঁজে বের করতে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলীর নেতৃত্বে একটি কমিটি করেছি। তারা নথি খুঁজে বের করার কাজ করছেন। তবে এখনও নথি খুঁজে পায়নি বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন। নথি খোঁজার কাজ চলমান রয়েছে, খোঁজ পেলেই তদন্ত কমিটির কাছে তা হস্তান্তর করা হবে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমতলী সেতু ভেঙে নিহতের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন আমরা বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি। তদন্ত কমিটি এ প্রতিবেদনে কারণ উল্লেখসহ কিছু সুপারিশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি সেতু ভেঙে নিহত ৯ জনের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। অনুদানের অর্থ পেলেই নিহতদের পরিবারকে তা বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
এর আগে গত ২২ জুন বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়ার চাওড়া নামক এলাকার একটি সেতুর মাঝের অংশ ভেঙে মাইক্রোবাস খালে পড়ে ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। বৌভাতের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে ওই মাইক্রোবাসে থাকা কনে পক্ষের ৯ জন যাত্রী পানিতে ডুবে নিহত হন। পরে এই দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন করতে বরগুনা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অনিমেষ বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে ওই দিন রাতেই ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন বরগুনা জেলা প্রসাশন। পরবর্তী সময়ে সেতু ভেঙে নিহতের ঘটনার সঠিক কারণ উদঘাটন করতে তদন্ত শুরু করেন ওই কমিটি।