দেশে চলমান কারফিউতে বেশ কয়েকদিন বন্ধ ছিল ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শেয়ারবাজার এবং মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো। ইন্টারনেট সেবাও পুরোপুরি বন্ধ ছিল। যদিও কাল থেকে সব ধরনের বাণিজ্যিক ব্যাংক, শেয়ারবাজার, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করেছে।
ইন্টারনেট সেবাও অল্প পরিসরে খুলতে শুরু করেছে। তবে প্রায় এক সপ্তাহ মোবাইল ব্যাংকিংসহ ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত সব ধরনের অনলাইন ব্যাংকিং বন্ধ থাকায় বিঘ্নিত হয়েছিল এটিএম সেবাও। স্বজনদের কাছে টাকা পাঠাতে পারছিলেন না প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যারা টাকা পাঠিয়েছেন, ৫-৬ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও স্বজনদের হিসাবে তা জমা হয়নি। ফলে থমকে গেছে রেমিট্যান্সের চাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে রেমিট্যান্স আসার অন্যতম মাধ্যম ব্যাংকিং চ্যানেল। বর্তমান মোবাইল বাংকিংয়ের মাধ্যমেও বিপুল রেমিট্যান্স আসছে। কয়েকদিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা প্রায় পুরোপুরি বন্ধ ছিল। দেশে কার্যরত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এফএফএস) অপারেটরদের মধ্যে শুধুমাত্র নগদ চালু ছিল সীমিত পরিসরে। অন্য এনএফএসে লেনদেন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। তাই সময়মতো রেমিট্যান্সের টাকা পারছিলেন না প্রবাসীদের স্বজনরা।
অপরদিকে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আন্তঃব্যাংক অপারেটিং সিস্টেমে ত্রুটি দেখা দেওয়ার কারণে প্রবাসীর স্বজনদের হিসাবে টাকা জমা হয় না। তাছাড়া মানিচেঞ্জারগুলোর মুদ্রা বিনিময় কার্যক্রম ব্যাহত হয়েঝে। যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় বিভিন্ন ত্রুটি সমাধান এবং তথ্য আদানপ্রদান সম্ভব হয়নি। তাই বিদেশি মানিচেঞ্জারগুলোর সঙ্গে লেনদেন ব্যাহত হয়েঝে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কয়েকদিন ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় নানামুখী সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েঝে। রেমিট্যান্স প্রবাহও ব্যাহত হয়েঝে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে। সাধারণ ই-মেইলের মাধ্যমে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ হয়- গত কয়েকদিন এ ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
জানা গেছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা আসতে সাধারণত ২-৩ দিন সময় লাগে। তবে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে ৫-৬ দিনেও টাকা পাননি অনেকে। সৌদিপ্রবাসী সাহে আলম স্ত্রী হিসাবে টাকা পাঠিয়েছেন গত বুধবার। কিন্তু গত মঙ্গলবারও টাকা আসেনি তার স্ত্রী সুরমা বেগমের ব্যাংক হিসাবে।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বাসিন্দা সুরমা বলেন, আগে ২-৩ দিনের মধ্যেই টাকা পেতাম। কিন্তু এখন এক সপ্তাহ পরও মোবাইলে মেসেজ আসেনি। ব্যাংক বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করতে পারিনি। একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী সাইফুলের পরিবার। ছোট ভাই নোমানের ব্যাংক হিসাবে গত বৃহস্পতিবার টাকা পাঠিয়ে ৫ দিনেও পৌঁছেনি। নোয়াখালীর বাসিন্দা মর্জিনা বেগও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এনে বিপাকে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, এমনিতেই ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে অনীহা আছে প্রবাসীদের। হুন্ডির দাপটে বিপুল রেমিট্যান্স পাচার হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। এর মধ্যেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হলো। তাই রেমিট্যান্স প্রবাহ ফের কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ২ হাজার ৩৯২ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দুই লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আহরণ এটি। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার।
গত জুন মাসে ২৫৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। একক মাসের হিসাবে জুনের প্রবাসী আয়ের এ অঙ্ক আগের ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। কোরবানির ঈদের আগের মাসটিতে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে।
তথ্যানুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ মার্কিন ডলার। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, যা অর্থবছর হিসাবে সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স।