ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় মেয়াদের জন্য শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। স্বাধীন ভারতের ৭৮ বছরের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় কোনো নেতা, যিনি তৃতীয়বার দেশটির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেলেন। তবে মোদি এর আগে দু’বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এলেও এবার নির্বাচনে খারাপ ফলাফল করায় তাঁকে সরকার পরিচালনার জন্য জোট শরিকদের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে। দেশটির বিরোধী দল মনে করছে, ৭৩ বছর বয়সী মোদির এবারের সরকার বেশি দিন টিকবে না।
আজ রোববার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এ সময় হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা মোদি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ‘সংবিধানের প্রতি সত্যিকারের আনুগত্য’ প্রদর্শনের শপথ নেন। এর পর আরও ৭২ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর শপথ হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কয়েকটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং ভারতের চলচ্চিত্র তারকাসহ বহু বিশিষ্টজন অংশ নেন বলে জানায় এনডিটিভি।
মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ২০১৪ সাল থেকে দেশটি শাসন করছে। এ সময় ভারতে হিন্দুত্ববাদের উত্থান এবং গণতান্ত্রিক মানের ভয়াবহ পতন ঘটেছে। তা সত্ত্বেও এবারও বিজেপি ভূমিধস জয় পাবে বলে বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা ছিল। বুথফেরত জরিপেও তেমনই দাবি করা হয়েছিল। তবে সেসব ভুল প্রমাণ করে এবার ৫৪৩ আসনে লোকসভায় মোদির দল পেয়েছে ২৪০ আসন। ভারতে সরকার গঠন করতে প্রয়োজন ২৭২ আসন।
এজন্য মোদিকে জোট শরিকদেরও মন্ত্রিসভায় স্থান দিতে হয়েছে। নতুন জোট সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও গতকাল শপথ নেন। তাদের মধ্যে ৩০ জন কেবিনেট মন্ত্রী, পাঁচজন স্বতন্ত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং ৩৬ জন প্রতিমন্ত্রী।
মোদির শপথের সময় দর্শক আসন থেকে ‘মোদি মোদি’ এবং ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান ওঠে। জওহর লাল নেহরু ছাড়া ভারতের আর কোনো প্রধানমন্ত্রীর টানা তিনবার শপথ নেওয়ার কৃতিত্ব নেই।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ভবনে উপস্থিত হলেন– বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মুহম্মদ মুইজ্জু, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল ওরফে প্রচন্ড, মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবীন্দ জুগনাথ প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা শাখরুখ খান, অক্ষয় কুমার, চলচ্চিত্র পরিচালক রাজকুমার হিরানি, শিল্পপতি গৌতম আদানি, মুকেশ আম্বানি প্রমুখ।
মন্ত্রিসভার মূল পদগুলো ধরে রেখেছে বিজেপি। গত মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা, সড়ক ও জনপথমন্ত্রী নীতিন গড়করিও শপথ নিয়েছেন।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের মিত্রদের মধ্যে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল (জেডিইউ) থেকেও নেতারা মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। লোকসভার নির্বাচনে টিডিপি ১৬ এবং জেডিইউ ১২টি আসনে জয় পেয়েছে। এর ওপর ভর করেই মোদি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন।
মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। কংগ্রেসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজ্যসভায় বিরোধী দলের নেতা হিসেবে খাড়গে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তবে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস শপথ অনুষ্ঠানে যায়নি।
আলোচিত বিজেপি নেতা এবং সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, অনুরাগ ঠাকুর এবং নারায়ণ রানে এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। স্মৃতি ইরানি উত্তরপ্রদেশের আমেথি থেকে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের কিশোরী লাল শর্মার কাছে ১ লাখ ৬ হাজার ভোটে হেরে গেছেন। মোদি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন। পাঁচ বছর আগে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীকে তাঁর পারিবারিক ঘাঁটিতে পরাজিত করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি।