আসছে ১৭ জুন উদযাপিত হবে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। এর মধ্যেই জমে উঠতে শুরু করেছে গাইবান্ধার কোরবানির পশুর হাটগুলো। বেড়েছে গরু, ছাগলসহ পশুর আমদানি। তবে বেচাকেনা কম। ক্রেতারা দাম বাড়ার কথা বললেও ভিন্ন কথা পশু বিক্রেতাদের। ক্রেতারা বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর পশুর দাম বেশি।
অন্যদিকে বিক্রেতারা বলেন, গো-খাদ্যের দামের কারণে কিছুটা বেশি দামে বিক্রয় করতে হচ্ছে কোরবানির পশু। গাইবান্ধায় ৪১টি স্থানে কোরবানির পশু কেনাবেচার হাট নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২৬টি স্থায়ী ও ১৫টি অস্থায়ী হাট রয়েছে। এছাড়াও ৭টি অনলাইন প্লাটফর্মেও পশু কেনা-বেচা হচ্ছে। যদিও এসব হাটে কেনাবেচা এখনও তেমন শুরু হয়নি।
গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানা যায়, চলতি বছর জেলায় ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৫১টি কোরবানি পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুত করা হয়েছে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৩৮১টি কোরবানি পশু। চাহিদার বিপরীতে উদ্বৃত্ত রয়েছে ২২ হাজার ৩৩০টি পশু। যা দেশের বিভিন্ন জেলার কোরবানি পশুর চাহিদা পূরণে সহায়ক ভূমিক রাখবে। জেলার ১৬ হাজার ৭৫৯ জন কৃষক ও খামারির কাছে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৩৮১টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এরমধ্যে গরু ৬৩ হাজার ২৪৬টি, মহিষ ১৪৭টি ও ছাগল-ভেড়া ৮১ হাজার ৯৮৮টি। কোরবানি পশুর হাটগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কাজ করছে ২১টি মেডিকেল টিম।
গাইবান্ধা সদরের দারিয়াপুর পশুর হাটে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী, রাজিবপুর উপজেলা থেকে ট্রাক, নসিমন, ভটভটিসহ নানা যানবাহনে হাটে কোরবানির পশু নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। হাটে আনা গরুর বেশির ভাগই দেশি। হাট পুরোদমে জমে না উঠায় ব্যবসায়ি ও খামারিদের অনেকেই পরবর্তী হাটে পশু আনার পরিকল্পনাও করেছেন।
পশু বিক্রেতারা বলেন, হাটে ক্রেতারা আসছেন। দাম জিজ্ঞাসা করেই তারা চলে যাচ্ছেন। ক্রেতাদের অনেকেই বাজারে পশুর দরদাম যাচাই করে দেখছেন। আবার অনেকেই পশু ক্রয় করতে হাটে এসেছেন। অনেকে ক্রয় করছেন। এবার অধিকাংশ ক্রেতাই খুঁজছেন মাঝারি আকারের গরু। হাটে আসা এসব গরু ৮০ থেকে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দাম হাঁকা হচ্ছে। তবে পশুর হাটে এবার ভারতীয় গরু না থাকায় দেশি গরুর চাহিদা ও দামওম কিছুটা বেড়েছে।
বিক্রেতা আজগর আলী বলেন, গতবারের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশ কম। খামারি ও কৃষকদের দেশীয় প্রযুক্তিতে মোটাতাজাকরণ করা উন্নতমানের দেশি গরু ক্রয় করতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাটে এসেছেন গরু ব্যবসায়ীরা।
তারা বলেন, এবার গরুর দাম বেশি। হাটে ছাগল নিয়ে আসা আবুল হোসেন বলেন, কোরবানির হাট পরিপূর্ণ জমে উঠতে আরও কয়েকদিন লাগবে। তখন দূরদূরান্ত থেকে গরু-ছাগল নিয়ে আসবেন। বর্তমান হাটে যেসব গরু- ছাগল আনা শুরু হয়েছে তার বেশিরভাগই স্থানীয়ভাবে লালন পালন করা।
পশু ক্রয় করতে হাটে আসা ক্রেতা আব্দুল মতিন বলেন, ১৫ কেজির মতো মাংস হবে, এমন খাসি ১৭ থেকে ২০ হাজার টাকা দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। এ সময় ক্রেতা-বিক্রেতারা হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহফুজার রহমান বলেন, গরুকে দানাদার খাদ্য ও কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর জন্য খামারিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভিটামিন খাওয়াতেও বলা হচ্ছে। তবে, গরুকে নিষিদ্ধ কোনো রাসায়নিক ও হরমোন ঔষধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এবং তা মনিটরিং করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার কামাল হোসেন বলেন, পশুর হাটে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প রাখা হবে। এছাড়া জাল নো শনাক্ত করার মেশিনও থাকবে। কোরবানির জন্য নির্ধারিত পশুর হাটে হাসিলের পরিমাণ সাইনবোর্ডে লেখা থাকতে হবে। যেকোন ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে হাট কমিটির লোকজন ও পুলিশ তৎপর থাকবে।