গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ অবসানে ইসরায়েল তিন ধাপের যে প্রস্তাব রেখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেটি খোলাসা করেছেন। এই প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি হামাসের হাতে আটক পণবন্দিদের মুক্তির কথা বলা হয়েছে। বিস্তারিত এই পরিকল্পনাকে ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতির রোডম্যাপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ৮১ বছর বয়সী এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। দেখে নেওয়া যাক কী আছে এই ধাপগুলোতে-
প্রথম ধাপ: মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, প্রথম ধাপে রয়েছে ‘পূর্ণ এবং সর্বস্তরের যুদ্ধবিরতি’র কথা, যা ছয় সপ্তাহ কার্যকর থাকবে। এতে গাজার জনাকীর্ণ এলাকাগুলো থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রত্যাহারের কথাও বলা হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েল থেকে যেসব লোককে হামাস জিম্মি করে আনে, তাদের মধ্য থেকে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ‘পণবন্দিকে’ মুক্তি দেবে তারা। এদের মধ্যে থাকবে নারী, বয়োজ্যেষ্ঠ ও আহতরা। যেসব পণবন্দি মারা গেছে, তাদের দেহ ফেরত দেওয়া হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদেরও মুক্তি দেওয়া হবে। এ বিষয়ে জো বাইডেন বলেন, ‘আমরা তাদের দেশে ফেরত চাই।’ এর বিনিময়ে কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।
এ ছাড়া, গাজার বিভিন্ন এলাকায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের তাদের বাড়িঘর ও আশপাশের এলাকাগুলোতে ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে। ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে বিধ্বস্ত গাজার উত্তরাঞ্চলেও যেতে পারবেন তারা। গাজায় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অস্থায়ী বাড়িঘর তৈরির জন্য সরঞ্জাম নিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হবে।
বাইডেন এ বিষয়ে জানান, আলাপ-আলোচনা চলতে থাকলে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো হবে।
দ্বিতীয় ধাপ: গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ছয় সপ্তাহের জন্য পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। এর বিনিময়ে হামাস বাকি সব পণবন্দিকে মুক্ত করে দেবে। এদের মধ্যে থাকবে পুরুষ ইসরায়েলি সেনারাও।
বাইডেন বলেন, দুপক্ষের মধ্যে স্থায়ীভাবে শত্রুতার অবসান ঘটবে, যদি চুক্তির শর্তগুলো বাস্তবায়ন করা হয়।
তৃতীয় ধাপ: যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় ব্যাপক পুনর্গঠন কাজ ও স্থিতিশীলতার পরিকল্পনা শুরু হবে।
বাইডেন বলেন, বাড়িঘর, স্কুল, হাসপাতাল নতুন করে গড়ে তোলা হবে। তবে এ সময়ে হামাস যাতে নতুন করে সশস্ত্র সংগঠনে পরিণত না হয়, আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। গাজা পুনর্গঠনের কাজের ব্যাপ্তি হতে পারে তিন থেকে পাঁচ বছর।
এ ছাড়া তৃতীয় ধাপে হামাসের হাতে থাকা যেসব পণবন্দি মারা গেছে, তাদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যদি হামাস প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তবে ইসরায়েল আবারও সামরিক তৎপরতা শুরু করতে পারবে।
বাইডেন আরও বলেন, মিসর ও কাতার হামাসকে শর্ত পালনে স্থির রাখতে কাজ করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল যাতে শর্ত পালন করে, সে বিষয়টি দেখবে।