ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রথম কোনো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তিনিই প্রথম প্রধান দলীয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী, যিনি আদালতের রায়ে একজন অপরাধী।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩০ মে) ট্রাম্পকে ব্যবসায়িক নথিপত্রে পর্ন তারকাকে ঘুষ দেওয়ার তথ্য গোপনের মামলায় ৩৪টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন নিউইয়র্কের আদালত। এ মামলায় আগামী ১১ জুলাই সাজা ঘোষণা করা হবে। এতে তিনি আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে পারবেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য কিছু যোগ্যতা থাকার প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে, জন্মগতভাবে মার্কিন নাগরিক হতে হবে এবং কমপক্ষে ১৪ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে হবে। তবে ট্রাম্পের এই দোষী সাব্যস্ত হওয়ার রায় এখনও নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে।
এই বছরের শুরুর দিকে ব্লুমবার্গ ও মর্নিং কনসাল্টের একটি জরিপে দেখা গেছে, যদি ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে প্রধান সুইং অঙ্গরাজ্যগুলোতে ৫৩ শতাংশ ভোটার রিপাবলিকানকে ভোট দিতে অস্বীকার করেন। চলতি মাসে কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির আরেকটি জরিপ দেখা গেছে, এক্ষেত্রে ট্রাম্পের ভোটারদের ৬ শতাংশ তাকে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা কম।
ডোনাল্ড ট্রাম্প পুরো বিচারের সময় জামিনে মুক্ত ছিলেন এবং বৃহস্পতিবার রায় দেওয়ার পরেও এতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি আগামী ১১ জুলাই আবারও আদালতে আসবেন। ওইদিন বিচারপতি জুয়ান মার্চান এ মামলায় সাজা শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন। বিচারককে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বয়সসহ বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। শাস্তির মধ্যে জরিমানা, প্রবেশন অথবা কারাদণ্ড হতে পারে।
ট্রাম্প এই রায়কে ‘অসম্মানজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, তিনি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। এ প্রক্রিয়া কয়েক মাস বা তারও বেশি সময় নিতে পারে। এ রায়ের বিরুদ্ধে তার আইনজীবীরা ম্যানহাটনে আপিল আদালতে আবেদন করতে পারেন। এর অর্থ হলো এ মামলায় সাজা ঘোষণার পরও ট্রাম্পের হাতকড়া পরে আদালত থেকে বের হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ তিনি আপিল আবেদনের প্রক্রিয়ার সময় জামিনে মুক্ত থাকবেন বলেই আশা করা হচ্ছে।
এটি সম্ভব। তবে এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম যে, ট্রাম্প কারাগারে সময় কাটাবেন। নিম্ন আদালতে এ মামলায় ৩৪টি অভিযোগের সবগুলোতেই অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছেন ট্রাম্প। প্রতিটি অভিযোগের জন্য সর্বোচ্চ চার বছর করে কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে বিচারপতি মার্চান বেশ কয়েকটি কারণে ট্রাম্পকে লঘু সাজা দিতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে ট্রাম্পের বয়স, অতীতে দোষী সাব্যস্ত না হওয়ায় এবং অভিযোগগুলো সহিংস অপরাধ সম্পর্কিত নয়। এমনটিও সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান প্রার্থীকে কারাগারে পাঠানো এড়াতে বিচারক মামলার নজিরবিহীন ধরনও বিবেচনা করতে পারেন।
এ ছাড়া ট্রাম্পের অন্য সব সাবেক প্রেসিডেন্টের মতো সিক্রেট সার্ভিস থেকে আজীবন সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এর মানে হলো কারাদণ্ড দেওয়া হলে কিছু এজেন্ট তাকে কারাগারে সুরক্ষা দিতে হবে। তা সত্ত্বেও একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে বন্দি হিসেবে নিয়ে কারাগার ব্যবস্থা চালানো অত্যন্ত কঠিন হবে।
কারাগার বিষয়ক পরামর্শক সংস্থা হোয়াইট কলার অ্যাডভাইসের পরিচালক জাস্টিন পেপার্নি বলেন, ‘কারাগার ব্যবস্থা দুটি বিষয়ের প্রতি নজর দেয়। এর মধ্যে কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখা এবং খরচ কম করা। ট্রাম্পের সঙ্গে এমনটি হলে তা হবে একটি খামখেয়ালী। কোনো কারা তত্ত্বাবধায়ক এর অনুমতি দেবে না।’
ট্রাম্প কি ভোট দিতে পারবেন?
আসন্ন নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে সম্ভবত ট্রাম্প ভোট দিতে পারবেন। তিনি ফ্লোরিডার বাসিন্দা। ফ্লোরিডার আইন অনুযায়ী, অন্য অঙ্গরাজ্যের আদালতে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি ভোট দেওয়ার অযোগ্য হবেন তখনই, যখন সেই অঙ্গরাজ্যের কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ভোট দেওয়ার অনুমতি না দেয়।
ট্রাম্পকে নিউইয়র্কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সেখানে অপরাধীদের ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, যতক্ষণ না তারা কারাবন্দি হন। এর মানে হলো ৫ নভেম্বর ট্রাম্প কারাগারে না থাকলে, তিনি ভোট দেওয়ার যোগ্য হবেন।