চতুর্মুখী চাপ আর হামাসের প্রতিরোধে এখন রীতিমতো চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন মধ্যপ্রাচ্যের কসাই হিসাবে খ্যাত ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। হামাস ধ্বংসে গাজার রাফাহ শহরে সর্বাত্মক অভিযানে গো ধরে এখন পালানোর পথও খুঁজে পাচ্ছে না ইসরাইলের হায়েনারা।
রাফাহতে যখন অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ, ঠিক তখনই গাজার অন্য স্থানে মাটি ফুরে বের হচ্ছেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাসের যোদ্ধারা। দুর্ধর্ষ গেরিলা কায়দায় আক্রমণ করেই আবারও হাওয়া হয়ে যাচ্ছেন। হামাসের এমন কৌশলে এখন দিশেহারা দখলদার বাহিনী।
গাজার দক্ষিণে মিশরীয় সীমান্তের রাফাহ শহরে যখন সব লটবহর নিয়ে ইসরাইলি সেনারা অভিযানের জন্য যাত্রা শুরু করতে যাবে, ঠিক তখনই গাজার উত্তরে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছেন হামাসের যোদ্ধারা। ‘হিট এন্ড রান’ কৌশলে ঘায়েল করছেন শত্রুপক্ষকে, ধ্বংস করছেন ইসরাইলি সাঁজোয়া যান।
অথচ গাজার উত্তরে যেখানে আবারও নতুন করে ইসরাইলি সেনাদের ফিরে যেতে হয়েছে, সেটি হামাস মুক্ত করার দাবি করেছিলো তেল আবিব। অথচ সেখানেই দুর্দান্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে হামাস। গেলো সপ্তাহের শেষ দিক থেকে গাজার উত্তরে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ লিপ্ত রয়েছে হামাস যোদ্ধারা।
ইসরাইলি বাহিনী অভিযান চালিয়ে কোনো একটি এলাকা হামাস যোদ্ধামুক্ত ঘোষণা করলেও, সেটি খুব বেশি সময়ের জন্য স্থায়ী হয় না। হামাস যোদ্ধারা আবার সংগঠিত হয়ে লড়াইয়ে ফিরে আসছেন। এর মধ্য দিয়ে একটি বার্তা স্পষ্ট যে, ভবিষ্যতে দীর্ঘ সময়ের জন্য গাজায় শক্তিশালী গোষ্ঠী হয়েই টিকে থাকবে হামাস।
সম্প্রতি গাজার উত্তরে জেইতুন ও জাবালিয়া এলাকায় ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। এতে দুই পক্ষকেই ব্যাপক ক্ষতি মেনে নিতে হয়েছে। ইসরাইল যেমন দাবি করেছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করার, তেমনি ইসরাইলি সেনা সদস্যদের হতাহতের খবরও শিরোনামে এসেছে।
হামাসের পক্ষ থেকে রোববার বলা হয়েছে, তাদের যোদ্ধারা জাবালিয়ার কাছে ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে তুমুল লড়াই করেছে। এছাড়া জেইতুনে ইসরাইলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে মর্টার শেল নিক্ষেপ করেছেন যোদ্ধারা। এসব মর্টারের কার্যকারিতা দেখে রীতিমতো চোখ কপালে তুলেছে ইসরাইলি সমর কর্তারা।
রাফাহ শহরে গাজায় হামাসের সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটি দাবি করে সেখানে অভিযান জোরদারের প্রক্রিয়ায় আছে ইসরাইলি বাহিনী। রাফাহ’র প্রধান সড়ক ধরে বিশাল সমর বাহিনী নিয়ে এগিয়েও যাচ্ছে আইডিএফ, কিন্তু গাজার অন্যান্য এলাকায় হামাসের প্রতিরোধযোদ্ধারা আবারও ফিরে আসায় বিপাকে পড়েছে ইসরাইল।
আল জাজিরাএক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের যোদ্ধারা রাফাহতে ইসরাইলি বাহিনীর ওপর তিনটি কৌশলগতভাবে অত্যাধুনিক আক্রমণ চালিয়েছে। এ সময়ে থার্মোবারিক বোমা, রকেটচালিত গ্রেনেড এবং বহু পর্যায়ের আক্রমণে কর্মী-বিরোধী রকেট ব্যবহার করেছে হামাসের যোদ্ধারা।
এই আক্রমণগুলো আগে থেকে পরিকল্পনা করছে হামাস। ইসরাইলি আক্রমণ প্রতিহতে নতুন কৌশল হাতে রেখেছে এই গোষ্ঠিটির সামরিক শাখা- কাসাম বিগ্রেড। সমন্বিত যুদ্ধ ইউনিট নিয়ে ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণে যাচ্ছে তারা। এই কৌশলে পূর্ব রাফাতে ইসরাইলি সেনাদের ওপর ১৮টি হামলা চালায় হামাস।
এক দশকের বেশি সময় ধরে দাঁতে দাঁত চেপে তিক্ত এক স্বীকারোক্তি দিয়ে যেতে হয়েছে ইসরাইলের সমর নেতাদের; আর তা হলো- হামাস সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে জানে। সম্পূর্ণ প্রস্তুত হওয়ার আগ পর্যন্ত নিজেকে সম্বরণ করো- এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাচ্ছে হামাস।